৯২ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থনীতির স্থপতি মনমোহন সিং। তিনি ভারতীয় রাজনীতিতে এক অনন্য প্রতিভা ছিলেন, যাঁর নেতৃত্বে ১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক উদারীকরণ সম্ভব হয়েছিল। তাঁর অবদান ভারতীয়দের মনে ও দেশের অর্থনীতিতে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।
১৯৯১ সালে যখন মনমোহন সিং অর্থমন্ত্রী হন, তখন ভারত ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ছিল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র ১০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল। জিডিপির ৮.৫ শতাংশ রাজস্ব ঘাটতি এবং ৩.৫ শতাংশ কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছিল। এই কঠিন সময়ে সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারতকে অর্থনৈতিক সংস্কারের পথে নিয়ে যান তিনি।
১৯৯১ সালের ২৪ জুলাই, সংসদে তাঁর প্রথম বাজেট পেশ করেছিলেন মনমোহন সিং। এই বাজেটই ছিল দেশের অর্থনীতির মোড় ঘোরানোর মাইলফলক। তিনি শিল্প ক্ষেত্রে লাইসেন্স রাজের অবসান ঘটান এবং বিদেশি বিনিয়োগের উপর বিধিনিষেধ তুলে দেন। এর পাশাপাশি, কর্পোরেট ট্যাক্স বাড়িয়ে এবং ভর্তুকি কমিয়ে তিনি কঠোর পদক্ষেপ নেন।
মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বে মাত্র দুই বছরের মধ্যেই ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০০০ কোটি ডলারে পৌঁছায়। তাঁর সংস্কার নীতি ভারতকে বিশ্ব অর্থনীতির মূল স্রোতে নিয়ে আসে। শিল্পের আধুনিকীকরণ ও আর্থিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অতুলনীয়।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০০৪-২০১৪ সাল পর্যন্ত তাঁর নেতৃত্ব দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাঁর ১৯৯১ সালের উদারীকরণ ভারতীয় অর্থনীতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। মনমোহন সিং শুধুমাত্র একজন নেতা নন, বরং তিনি ভারতের অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের প্রতীক।