নীলাঞ্জন দাশগুপ্ত
“আঠারো বছর বয়স যে দুর্বার,
পথে প্রান্তরে ছোটায় বহু তুফান“
সুকান্ত ভট্টাচার্য।
ডি গুকেশ, আঠারো বছর বয়সি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দাবাড়ু! কথায় বলে, একাগ্রতা এবং মনের জোর থাকলে যে কোন বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে যাওয়া যায় বুদ্ধি খাটিয়ে। একইভাবে ১৮ বছর বয়সে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবার নেপথের রয়েছে গুকেশের মনের জোর দেখে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা উপরে উল্লিখিত লাইন দুটি মনে পড়ে যায়। তবে এই যাত্রাপথ কখনোই সহজ ছিল না। সোজা পথে হাঁটতে গিয়েও পেরোতে হয়েছে বহু চড়াই উতরাই। কখনো সামনে এসে দাঁড়িয়েছে পাহাড় প্রমাণ বিপত্তি। থামেননি গুকেশ।
বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপকে এখনো অবশ্য সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করছেন পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেন। তাঁর কথায়, ক্যান্ডিডেটস দাবায় যোগদান নৈব নৈব চ। তবে সত্যি কথা বলতে, দোষে গুনে ভরা এই সমালোচকেরাও মানুষ। নেতিবাচক উস্কানি মূলক প্রতিক্রিয়া থাকলেও নীরবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন গুকেশ। অর্থাৎ নিজের কাজে নিজেকে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। তাই বলাই বাহুল্য, সমালোচকদের সমালোচনা গুকেশ নামক কাঁচে প্রতিফলিত হয়ে সমালোচকদের কাছেই ফিরে গিয়েছে।
বর্তমানে ক্রিকেট আর ফুটবল হল আন্তর্জাতিক লেভেলের খেলা, বলা যায় বিদেশের খেলা। কিন্তু দাবা খেলা? সে যে দেশের খেলা। কিন্তু এই খেলার জনপ্রিয়তা আর প্রচারের যা অভাব রয়েছে, তাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ভাগ্যিস গুকেশ জয় লাভ করলেন। অথচ,সেই খেলাতেই গুকেশের জয়জয়াকার, সঙ্গে ভারতের জয়ধ্বনি। দেশ জুড়ে প্রতিটি সংবাদপত্রের পাতায় ক্রিকেটে কোন খেলোয়ার কত রান করলেন বা উইকেট নিলেন, সেটা লেখা থাকে রসিয়ে কষিয়ে। ফুটবলের ক্ষেত্রেও তাই। কিন্তু গুকেশ আর ডিং লিরেনের খেলার চালের পরিচয় সংবাদপত্রের পাতাগুলিতে সেই ভাবে পসারি জমাতে পারেনি। কারণ দাবা সম্পর্কে অনেকেরই অজ্ঞতা রয়েছে।
আমাদের দেশ তথ্য ভারতবর্ষে এখনো পর্যন্ত প্রতিভাবান এবং উদীয়মান দাবাড়ুদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তাই দাবার চালগুলো নিয়ে আলোচনা দরকার, লেখারেখি করা দরকার। কখনো বা আটচালায় বসে আড্ডা দেওয়া দরকার। তবে বর্তমানে অনেক বৈঠকখানায় দাবার ঠেক বসে। তবে সবটাই ভারতীয় নিয়মে খেলা হয়। দাবা খেলা নিয়ে খুনসুটি, তর্ক বিতর্ক আজ অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে l সুখস্মৃতি হয়ে মনের মনিকোঠায় স্থান পেয়েছে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে খেলোয়াড়রা কম্পিউটারের সঙ্গে অনুশীলন করে থাকেন। এই সমস্ত প্রতিভাবান মানুষদের খ্যাতির শীর্ষে উঠতে দেওয়া উচিত। গাছে তুলে দিয়ে মই কেড়ে নেওয়া উচিত নয়। তবে আন্তর্জাতিক খেলায় যেহেতু খেলোয়াড়রা অংশগ্রহণ করেন তাই স্বাভাবিকভাবেই, সমালোচনা হবে। সমালোচনা হবে না, এটা প্রত্যাশা করা ভুল। কিন্তু খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছানোর পর নিঃসঙ্গ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। আর এই একা হয়ে যাবার বিষয়টি শীর্ষস্থান থেকে মানুষটিকে একেবারে নিজেরই পদতলে ঠেলে ফেলে। তবে হ্যাঁ, দেশবাসী আশাবাদী, আগামী দিনের নিঃসঙ্গতা এবং সমালোচনাকে কিভাবে পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায় তা নিশ্চয়ই শিখিয়ে দেবেন ডি গুকেশ।
