সম্পাদকের কলমে
নীলাঞ্জন দাশগুপ্ত
মানুষ নাকি সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। তবে প্রযুক্তিগত ক্ষমতা দিনের পর দিন সাধারণ মানুষের সামর্থের পরিসরকে যেন গ্রাস করে নিচ্ছে ক্রমশই। একদিকে শারীরিক সক্ষমতা আর অন্যদিকে যন্ত্রের সক্ষমতা, এই দুই বিষয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতার অন্ত হয়েছে বহুকাল আগেই। মেশিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে মানুষ পারেনি। মস্তিষ্ক ক্ষমতা এবং বুদ্ধির দৌড়ে মানুষের শক্তির নির্ধারিত সীমা গুলিকে টপকে গিয়েছে যন্ত্র এবং প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি। সে অংক কষাই হোক কিংবা দাবা খেলা। দ্বিগবিজয় করছে শুধুমাত্র যান্ত্রিক সক্ষমতা। চ্যাটজিপিটি থেকে শুরু করে গুগল জেমিনি, যেন সেই যান্ত্রিক সক্ষমতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ঠিক সেই কারণেই হয়তো, দৈনন্দিনীর বিভিন্ন কাজে কর্মে মাথা খাটিয়ে কাজ করার প্রয়োজন পড়ছে না সাধারণ মানুষের। তাই হয়তো মাথা খাটানোর আগে সকলেই চ্যাটজিপিটি কিংবা সমগোত্রীয় ওয়েবসাইটের সহায়তা নেয়।
বিগত এক বছরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জনিত বিভিন্ন আবিষ্কার কিছুটা হলেও আতঙ্কিত করে তুলেছে সারা বিশ্বের মানুষকে। এমন অনেক কাজ রয়েছে সেই সমস্ত কাজ গুলিতে সত্যিই কর্মীর প্রয়োজন পড়বে কিনা, সেই নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। অল্প সংখ্যক মানুষ দিয়েই হয়তো কাজ মিটিয়ে ফেলা যাবে। তাহলে সত্যিই কি, কর্মসংস্থান হারিয়ে ফেলবে মানুষ? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে মানব মস্তিষ্কে। কারণ বর্তমানে প্রতিটি পদে পদে সেই প্রমাণই মিলছে হাতেনাতে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই এখন মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের কাজ একেবারে হুবহু রুট করে ফেলেছে। সে হোক না কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা কৃত্রিম মেধা, তবুও মানুষের থেকে কাজ করছে দ্রুত।
সিক্সথ সেন্স, অর্থাৎ যাকে আমরা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ও বলে থাকি, এবার কি তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিক্সথ সেন্সকেও রপ্ত করে নেবে? নতুন বছরে পদার্পনের আগে যেন এই সংশয়ে ভুগতে হচ্ছে মানুষকে। সম্প্রতি জার্মানির এক গবেষক দল রসায়নশাস্ত্র এবং কৃত্রিম বুদ্ধি নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন। শেষ লগ্নে প্রকাশিত একটি সংবাদ তেমন সংশয় জাগিয়ে তুলেছে। পরীক্ষার বিষয় হল, হুইস্কির স্বাদ গন্ধ নিয়ে। কিন্তু এই পরীক্ষা যে কতটা কঠিন, তা জানেন কি সুরা রসিকরা? অথচ তারই সূত্র রয়েছে বিজ্ঞানের কাছে।
পানীয়ের মধ্যে ৪০ টিরও বেশি কমপাউন্ড বা যৌগ মিশিয়ে ঐ উপকরণ গুলির মধ্যে থাকা অণুবিন্যাসের উপরেই নির্ভর করে তার নিজস্ব চরিত্র। হুইস্কির চরিত্র বিচারের কাজটি যন্ত্র মেধার ভিত্তিতে তৈরি অ্যালগরিদম বা গণনাসূত্রকে কাজে লাগিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। তাই ঘ্রাণ আর আস্বাদনের ভিত্তিতে বিভিন্ন গোত্রের পানীয়কে চিনতে পারা নেহাত সহজ কাজ নয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় দক্ষতা এবং প্রশিক্ষণ। আর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হল ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়। ঠিক সেই কারণেই চা থেকে কফি হোক কিংবা সুরা, বিভিন্ন পানীয়ের চরিত্র নির্ধারণের কাজে যে সকল মহান ব্যক্তিরা পারদর্শী, তাঁদের সংখ্যা খুবই সীমিত। তাইতো তাঁদের কদরও কম নয়। তবে জার্মানির ওই গবেষকরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, মানুষের বুদ্ধি কেউ ঠুটো করে দিতে পারে প্রযুক্তি। তাই অদূর ভবিষ্যতে পানীয়ের সূক্ষ্মবিচারে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আছে মানুষ যে গোহারা হারবে, তা অনুমেয়।