নীলাঞ্জন দাশগুপ্ত
কিছুক্ষণের আনন্দ চরম বিপদ ডেকে আনে। তাই স্বাভাবিকভাবেই সেই ধরনের আনন্দকে স্বাগত জানানোর কোন মানেই হয় না। কারণ তার পাশাপাশি বিপদের আগমন ঘটে। যদিও শহর কলকাতা সহ শহরতলীর তরুণ প্রজন্ম এই কথাই মোটেই বিশ্বাসী নয়। জীবন তো একটাই। অতিরিক্ত উদ্দাম জীবনযাত্রার কারণে সেই জীবনে কালো ছায়া নেমে এলে কিছু করার থাকে না। আনন্দ অনেক সময় বিষাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু অতিরিক্ত হটকারিতা এবং উত্তেজনা দমনের ক্ষমতা না থাকার জন্য সম্প্রতি এক বাইক-দুর্ঘটনায় উড়ালপুল থেকে পড়ে গিয়ে দুই যুবকের মৃত্যু হয়।
শীতের ভোরবেলায় বাইকে ‘জয়রাইড’ বা উল্লাস-সফরে বেরিয়েছিলেন ওই যুবকেরা। গতি এবং সুরক্ষা চুলোয় যাক, আনন্দ ফুর্তি বজায় থাকে। হয়তো তারা এই কথাকে মাথায় রেখেই আনন্দযাত্রায় বিধি-নিষেধ মানেনি। আর ঠিক সেই কারণে দ্রুতগতিতে উড়াল পুলের উপর বাইক চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৬০ ফুট নিচে রাস্তায় পড়ে যান।
গত কয়েক বছরে বহু দুর্ঘটনার সাক্ষী মা উড়ালপুল। আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটে গিয়েছে ওই একই উড়াল পুলে। গত কয়েক বছরে তীব্র গতির জন্য উড়ালপুল থেকে নিচে পড়ে গিয়ে প্রাণ গিয়েছে বহু মানুষের। শুধু তাই নয়, উড়ালপুল থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার ঘটনাও ঘটেছে। কখনো দুর্ঘটনা কখনো আবার আত্মহত্যার ঘটনা, একের পর এক এই মর্মান্তিক বিষয়গুলিকে ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন করা যায়নি এখনো পর্যন্ত। শহরের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উড়াল ফলে গতি নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যকর উপায় এখনো পর্যন্ত ভাবনাচিন্তার মধ্যেই এলো না প্রশাসনের? উঠছে এই প্রশ্নটিও। উড়ালপুলের বিপজ্জনক বাঁকে ক্র্যাশ ব্যারিয়ার লাগানোর প্রস্তাবও উঠেছে।
উড়ালপুলে যানবাহনের গতি এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকরী উপায় খোঁজার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে প্রশাসন। তাই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তবে শুধু এই উড়ালপুল নয়, কলকাতার মতো জনবহুল শহরে তীব্র গতি এবং বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রায় সময় বহু দুর্ঘটনা হচ্ছে। শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়েও যদি প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়, তাহলেও মন্দ হয় না। কিছুদিন আগেই সল্টলেক অঞ্চলে স্কুটি এবং বাসের সংঘর্ষে শিশুর মৃত্যু ঘটে। তারপর রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী কলকাতার রাস্তায় তীব্র গতিতে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়ে দেন কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
এছাড়াও অতি উল্লাসে হেলমেট ছাড়া বাইক চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি সবথেকে। কিন্তু পুলিশের নজরদারি কোথায়? যদিও এই ধরনের দুর্ঘটনাগুলি বন্ধ করার পুরো দায় পুলিশ প্রশাসনের উপরেও চাপিয়ে দেওয়া যায় না। কারণ যতদিন না পর্যন্ত মানুষের নিজের অন্তরে, তার পরিবার-পরিজনের আকুতি গিয়ে পৌঁছাবে ততদিন টনক মরবে না অতি উল্লাসীদের। আইন ভাঙাকেই আনন্দোৎসব মনে করে প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার কি কোন মানে হয়? এরা শুধু নিজেদের নয়, ক্ষতি করে নিজেদের পরিবার-পরিজনের। এই কাণ্ডজ্ঞানহীনতাকে ক্ষমা করা উচিত নয়। আনন্দের নামে রাস্তায় যথেচ্ছাচার আর নয়, আসুক কঠোর আইন! বন্ধ হোক একের পর এক মৃত্যু মিছিল।