দ্বিতীয় হুগলি সেতু আলোকিত বাবুলের দাদাগিরির দৌলতে…….
তৃণমূলের বাবুল সুপ্রিয় এবং বিজেপি সাংসদ তথা কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দ্বৈরথে তুলকালাম পরিস্থিতি দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে। অকথ্য গালিগালাজ থেকে শুরু করে, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। এমনকি হামলার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু ঠিক কি এমন ঘটনা ঘটেছিল? যার কারণে তৃণমূল এবং বিজেপির দুই প্রথম সারির নেতা বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়লেন তাও আবার দ্বিতীয় হুগলী সেতুর উপর?
জানা গিয়েছে যে,শুক্রবার রাত ৯টা নাগাদ দ্বিতীয় হুগলি সেতুর উপর দিয়ে নিয়ম ভঙ্গ করে বেপরোয়া গতিতে নাকি ছুটে যাচ্ছিল অভিজিতের গাড়ি। তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। তারপরেই বাবুলের উপরে চড়াও হন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলে অভিযোগ। অন্যদিকে বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে হামলা এবং গালিগালাজের পাল্টা অভিযোগ এনেছেন তমলুকের বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
দ্বিতীয় হুগলি সেতু দিয়ে হাওড়ার দিকে যাচ্ছিলেন বিজেপি নেতা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ঠিক একই সময় দ্বিতীয় হুগলি সেতু দিয়ে যাচ্ছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। তখনই একে অপরের বিরুদ্ধে রীতিমত বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে যান দুজনে। তাতেই দ্বিতীয় হুগলি সেতুর উপর যানজট সৃষ্টি হয়। বাবুল সুপ্রিয় অভিজিতের বিরুদ্ধে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি ছুটিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনেছেন। আর প্রতিবাদ জানাতেই অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজি শুরু করেন নাকি অভিজিৎ! বাবুলের দাবি, নিয়ম ভেঙে বেপরোয়া গতিতে ছুটছিল অভিজিতের। প্রতিবাদ জানানোয় গাড়ি থেকেই অভিজিৎ অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে দেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। ঘটনাচল থেকে সামনে আসা সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বাবুল সুপ্রিয় রীতিমতো দাবি করছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য। অন্যদিকে বাবুল সুপ্রিয়কে শান্ত করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অভিজিতের নিরাপত্তা রক্ষীরা। অন্যদিকে, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে গালিগালাজ করার অভিযোগ তুলে, তাঁকে রীতিমতো ক্ষমা চাইতে জোর করেন বাবুল সুপ্রিয়। ক্ষমা না চাইলে অভিজিতের গাড়ি যেতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বসেন বাবুল।
বাবুল সুপ্রিয়র রবীন্দ্র, দ্বিতীয় হুগলি সেতু দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় প্রচুর সংখ্যক স্কুটার থেকে বাইক দেখার পরেও তীব্র হর্ন বাজাতে বাজাতে যাচ্ছিল অভিজিৎ গাড়ি। সেখানে একটি মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু তারপরেও অভিজিতের গাড়ি সাইরেন বাজানো বন্ধ করেনি। এরই মধ্যে বাবুল সুপ্রিয় খেলা কি গাড়ির ভিতর থেকেই গালিগালাজ দিতে শুরু করেন অভিজিৎ। বাবুল জানিয়ে দেন, অভিজিতের সাইরেন বাজানোর অনুমতি নেই। l শুধু তাই নয় অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়িতে নাকি কোন বাতি এবং পরিচয় লেখা ছিল না। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে বাবুল সুপ্রিয়র অভিযোগের সত্যতা নিয়ে। কারণ সাইরেন বাজাতে বাজাতে অভিজিতের গাড়ি রাস্তা দিয়ে ছুটে যাচ্ছিল, তাতে লেখা ছিল “তমলুকের সাংসদ” কথাটা।
কিন্তু একজন সাংসদ হয়ে কিভাবে রাস্তা দিয়ে এমন জোরে গাড়ি ছটাতে পারেন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংসদ? একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমের কাছে এই প্রসঙ্গে অভিজিৎ বলেন, “হাওড়ার দিকে আসছিলাম আমি। আমার একটু তাড়া ছিল। তাই হর্ন বাজানো হয়। হঠাৎ দেখি একটা গাড়ি আমার গাড়ি আটকে দাঁড়ায়। চিৎকার করে জানতে চচায় হর্ন দেওয়া হচ্ছে কেন। তাতে আমি বললাম, আবার হর্ন দাও। দেখি কী হয়। এর পর দেখলাম গাড়ি থেকে বাবুল সুপ্রিয় নেমে এলেন। আরও তিন-চারজন ছিলেন ওঁর সঙ্গে। নেমে এসে বাবুল আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি দিতে লাগলেন। গাড়ি কাচ ছিল। উনি হাত চালালেন। তাতে আমার মোবাইল পড়ে গিয়ে খারাপ হয়েছে। আমার সঙ্গ Y প্লাস ক্যাটেগরির সিকিওরিটি থাকে। ওরা বাবুলকে আটকান। অনেকক্ষণ ধরে চলছিল। আমাকে সরি বলতে বলেন। আমি জানিয়ে দিই, কিছুই বলব না আপনাকে। আপনাকে বিজেপি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলে এখন পা ধরে রাজনীতি করেন। সেটাই করুন। আপনাকে আমি গ্রেফতার করাব। উনি উত্তেজিত হয়ে আরও জঘন্য কথা বলেন। আমি গাড়িতেই বসেছিলাম। নিরাপত্তার প্রশ্ন রয়েছে। CISF না বললে নামি না। মানুষকে উত্তেজিত করছিলেন উনি। ওদের তো রাগ আছে! বহু লোককে চাকরি বিক্রি করেছিলেন। সেই চাকরি গিয়েছে। তা নিয়ে গালি দিলেন আমাকে। মাতাল হয়ে এসব করছিলেন। সেটা বললে আরও উত্তেজিত হয়ে যান।”
অন্যদিকে বাবুলের মতামত, “এখন উনি বলছেন আমি না কি মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলাম। সকলেই জানেন যে বাবুল সুপ্রিয় মদ্যপান করে না। সেতুতে কাজ চলছে বলে একটা লেন বন্ধ রয়েছে। আমার গাড়িতে বাতিও ছিল না। নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম একটা গাড়ি বেপরোয়া ভাবে ছুটছিল। হুটার বাজাতে বাজাতে সবাইকে ওভারটেক করছে। আমার গাড়িও এমন ভাবে ওভারটেক করে যে একটা বাইকে ধাক্কা লেগে যেত। কিছুটা দূর এগিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতেই চালকের কাছে জানতে চাই, কেন এভাবে গাড়ি চালাচ্ছ? দেখি, পিছনের সিট থেকে ঝুঁকে চালককে কেউ গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যেতে নির্দেশ দিচ্ছেন। এর পর নেমে গিয়ে কথা বলি আমি। তখনই দেখলাম গাড়িতে তমলুকের সাংসদ লেখা। ওঁর সঙ্গে কখনও কথা হয়নি। আমি ভাল করেই কথা বলছিলাম। কিন্তু উনি গোড়া থেকেই অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলছিলেন। ব্যক্তিগত আক্রমণ করলেন, বাংলায় গালাগালি করলেন এটা কাম্য ছিল না। তর্কাতর্কি বা ঝগড়া হয়নি। গালাগালি করার দরকার ছিল না। উনি জানালেন, যা করেছেন বেশ করেছেন। যা করার করে নিতে। আমার পরিবারকে আক্রমণ করায় ক্ষমা চাইতে বলি। উনি যা বলেন আমাকে, তার পাল্টা জবাব আমিও দিই। কিন্তু ওঁর পরিবারকে গালি দিইনি। কিন্তু উনি বলছিলেন, ‘তুই এখানে দাঁড়া। দেখ তোর কী করি।’ উনি যে লাল-নীল বাতি লাগিয়েছিলেন, সেটাও বেআইনি। ওটা পুলিশের বাতি। এতে উনি বলেন, ‘তুই beacon বানান বলতে পারবি’? আমি বললাম, এসব কী বলছেন। আমি বানান জানি না কে বলল আপনাকে?”
দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ওপর রাজ্যের শাসক দল এবং প্রধান বিরোধীদলের দুই নেতার এমন বাদানুবাদ নিয়ে রীতিমত সরগরম হয়ে রয়েছে রাজ্য রাজনীতি।