বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়ার চাঞ্চল্যকর জালিয়াতির পর্দাফাঁস করল পুলিশ। উত্তর ২৪ পরগনার ছোট জাগুলিয়া থেকে গ্রেফতার এক অভিযুক্তের জবানবন্দি থেকে উঠে এসেছে চমকে দেওয়ার মতো তথ্য। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পাসপোর্ট চক্রটি অত্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পরিচালিত হত, যেখানে খদ্দের জোগাড়ের জন্য এজেন্ট থেকে শুরু করে নথি তৈরির বিশেষ কর্মীও নিয়োগ করা হয়েছিল।
তদন্তকারীদের মতে, এই চক্রের মূল মাথা সমরেশ বিশ্বাস এবং মনোজ গুপ্ত। তারা মোটা টাকা বিনিয়োগ করে একটি সুনিপুণ নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল। এজেন্টদের মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের খুঁজে এনে ২.৫-৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভারতীয় পাসপোর্ট বানানো হত। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকা খরচ হত নথি এবং পাসপোর্ট তৈরিতে। বাকি অর্থ ছিল চক্রের লাভ।
তদন্তে জানা গেছে, পাসপোর্ট চক্রের এজেন্টরা প্রতি খদ্দের জোগাড়ের জন্য ৩-৫ হাজার টাকা পেত। পঞ্চায়েত থেকে জন্মসার্টিফিকেট এবং আধার কার্ড তৈরি করতে খরচ হত ২-৫ হাজার টাকা। চক্রটি পুলিশের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলে, যেখানে পাসপোর্ট যাচাইয়ের দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীদের দেওয়া হত ১০-১২ হাজার টাকা। ডাকঘরের পিওনরাও এই চক্রে যুক্ত ছিল এবং তারা পাসপোর্ট প্রতি ১-৩ হাজার টাকা পেত।
এমনকি পাসপোর্ট তৈরির কাজ নিখুঁতভাবে পরিচালনা করতে মাসিক ২৫ হাজার টাকায় একজন বিশেষ কর্মীকেও নিয়োগ করেছিল চক্রটি। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্যের শাসকদলের আশীর্বাদেই এতদিন এই চক্র চলতে পেরেছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে পুলিশ ধরপাকড়ে নামতে বাধ্য হয়েছে।
এই জালিয়াতির ঘটনায় পুলিশের ভূমিকাও তদন্তের আওতায় এসেছে। বিরোধীদের প্রশ্ন, রাজ্য প্রশাসনের নাকের ডগায় এত বড় চক্র কীভাবে চলল? তদন্ত আরও গভীরে চালানোর দাবি উঠছে।