একসময় কমরেডরা জ্যোতি বসুর মরদেহের উপর লাল ঝান্ডা আচ্ছাদিত করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে শেষ বিদায় জানিয়েছিলেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার জন্য সেই লাল পতাকার উপরেই জাতীয় পতাকা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে পনেরোটা বছর। শুক্রবার ছিল জ্যোতি বসুর ১৫ তম প্রয়াণ বার্ষিকী। এদিন তাঁরই নামাঙ্কিত গবেষণাকেন্দ্রের উদ্বোধনে দেখা গেল না লাল ঝান্ডা। পরিবর্তে নির্মীয়মান জ্যোতি বসু গবেষণা কেন্দ্রের ছাদে উড়ল দেশের জাতীয় পতাকা।
এই গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১০ সালে নভেম্বরে একটি পৃথক ট্রাস্ট গঠন করা হয়। সেই ট্রাস্টের উদ্যোগে গত বছর ১৭ই জানুয়ারি জ্যোতি বসুর প্রয়াণ দিবসের দিনে সীতারাম ইয়েচুরির উদ্যোগে জ্যোতি বসু গবেষণাকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয় নিউটাউনে। জ্যোতি বসুর ১৫ তম প্রয়াণ দিবসের দিনে অর্থাৎ শুক্রবার প্রথম পর্যায়ের নির্মিত ভবনের উদ্বোধন করলেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর সমন্বয়ক প্রকাশ কারাট। কিন্তু সকলের মনে একটাই প্রশ্ন, ভবনের মাথায় লাল ঝাণ্ডার পরিবর্তে জাতীয় পতাকা কেন রাখা হলো?
জানা গিয়েছে যে, জ্যোতি বসুর নামাঙ্কিত এই গবেষণা কেন্দ্র দলের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করবে। সেই কারণেই লাল ঝাণ্ডার পরিবর্তে জাতীয় পতাকায় স্থান পেয়েছে। এই কেন্দ্র পার্টির শাখা সংগঠন নয়। সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এ বিষয়ে বলেন,”জ্যোতি বসু গবেষণাকেন্দ্র যাতে দক্ষিণ এশিয়ার একটি অন্যতম প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারে, সেই লক্ষ্যেই আমরা এগোতে চাই। উপমহাদেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মাথায় রেখেই আমরা এই ভাবনা ভেবেছি। সে কারণেই জাতীয় পতাকা।”
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই নবান্নর পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকতে পারার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল জ্যোতি বসুর নামাঙ্কিত গবেষণা কেন্দ্রের জন্য তৈরি হওয়া ট্রাস্টের চেয়ারম্যান তথা প্রবীণ সিপিআইএম নেতা বিমান বসুকে। সেদিন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য ব্যতীত নিউ টাউনের কর্মসূচিতে তেমন কোনও বিরোধী নেতাদের দেখা যায়নি। বাংলাদেশের নাগরিক, বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী তথা প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সিপিএম রাজ্য দফতরের ছাদে জাতীয় পতাকা তুলতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছিলেন বিমান বসু। সময়টা ছিল ২০২১ সালের ১৫ অগস্ট। ভুলবশত উল্টো পতাকা তুলে ফেলেছিলেন তিনি। ছুটে এসে সেই বিপত্তি থেকে বাঁচিয়েছিলেন মোহাম্মদ সেলিম। শুক্রবার অবশ্য তেমন কিছু হলো না। একেবারে স্বমহিমায় উড়লো জাতীয় পতাকা।