কলকাতার সিএমআরই হাসপাতালে পাঁচ মাসের গর্ভবতী শ্রাবণীর (নাম পরিবর্তিত) মেরুদণ্ডে বিরল যক্ষ্মা বা বোন টিবি ধরা পড়ে। কোমর থেকে পা পর্যন্ত অবশ হয়ে যাওয়া এবং মলমূত্র নিয়ন্ত্রণ হারানোর মতো গুরুতর উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসকদের দক্ষতায় সফল অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, বর্তমানে মা ও গর্ভস্থ সন্তান উভয়ই সুস্থ।অস্ত্রোপচার দলের প্রধান নিউরোসার্জেন রথীজিৎ মিত্র জানান, গর্ভাবস্থায় এমন জটিল সার্জারি বিরল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা এক্স-রে শিশুর ক্ষতি করতে পারে। রোগীর ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ এড়াতে অত্যাধুনিক বোন স্ক্যালপেল ব্যবহার করা হয়, যা আল্ট্রাসাউন্ডের সাহায্যে কাজ করে এবং রক্তক্ষরণ কমায়। ইউরোপ ও আমেরিকায়ও এই যন্ত্র সীমিতসংখ্যক হাসপাতালে ব্যবহার হয়।
গর্ভাবস্থার কারণে রোগীকে পাশ ফিরে শুইয়ে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করা হয়, যা ছিল আরও একটি চ্যালেঞ্জ। নিউরোসার্জেন রথীজিৎ মিত্র, সৌমিত্র রায় এবং অ্যানেস্থেসিস্ট সুবীর বসুঠাকুর ও দেবর্ষি রায়ের যৌথ দক্ষতায় এই জটিল প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হয়।অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘ পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। গর্ভাবস্থায় ওষুধ প্রয়োগে বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মহেশ চৌধুরী ও সুজয় মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। তিন-চারদিন পর শ্রাবণী পায়ে সাড়া পান। বর্তমানে ফিজিয়োথেরাপির সাহায্যে তিনি স্বাভাবিক হাঁটাচলা শুরু করেছেন।
এই বিরল অস্ত্রোপচার চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মা ও সন্তানের সুস্থতা চিকিৎসকদের দক্ষতা ও আধুনিক প্রযুক্তির জয়গান গেয়েছে।