কুণাল ঘোষ, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক পরিচিত নাম, যাঁর জীবনপথ সাংবাদিকতা থেকে রাজনীতির মঞ্চে বিস্তৃত। বামফ্রন্ট সরকারের সময় তিনি একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনামলে তাঁর জীবনে আসে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
২০১২ সালে কুণাল ঘোষ তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০১৩ সালে সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম জড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তিনি গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘ সময় কারাবাসে কাটান। তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছিল, যা নিয়ে রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
কারামুক্তির পর কুণাল ঘোষ পুনরায় সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসেন। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র হিসেবে তিনি দলের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। তবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের সঙ্গে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে মঞ্চ ভাগ করে নেওয়ার কারণে দলের অভ্যন্তরে সমালোচনার মুখে পড়েন। এর ফলে তাঁকে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
তবে কিছু মাস পর, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে, উপনির্বাচনের আগে কুণাল ঘোষ পুনরায় সাধারণ সম্পাদক পদে ফিরে আসেন। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে জমা দেওয়া স্মারকলিপিতে তাঁকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই পুনর্বহাল নিঃশব্দে ঘটলেও রাজনৈতিক মহলে তা বিশেষ গুরুত্ব পায়।
সম্প্রতি, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে, কুণাল ঘোষ একটি ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করে রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তিনি লেখেন, “২০০ পাতার বই ১৫১ পাতা থেকে পড়া শুরু করলে জানা বোঝার ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণতা থেকে যায়।” অনেকে মনে করেন, এটি দলের অভ্যন্তরীণ কিছু নেতার প্রতি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য।
এছাড়া, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কুণাল ঘোষ বলেন, “দিল্লির বিষয় দিল্লিতে। এখানে কোনও মন্তব্য নেই। বাংলায় ওসবের প্রভাবও নেই।” তিনি আরও দাবি করেন, ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস আড়াইশোর বেশি আসন পাবে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চতুর্থবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
কুণাল ঘোষের এই উত্থান, পতন ও পুনরুত্থানের গল্প পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর জীবনের এই বিভিন্ন অধ্যায় রাজ্যের রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।