‘অমর একুশে’ গানে গানে অংশ নিলেন বাংলাদেশের পড়ুয়ারাও ৷ তবে এবার বাংলাদেশ ভবনের বদলে ইন্দিরা গান্ধি জাতীয় সংহতি কেন্দ্রে উদযাপিত হল মাতৃভাষা দিবস । বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বাতিল করা হয়েছে সন্ধ্যানুষ্ঠানও ৷ যদিও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাদেশ ভবন সংস্কারের কাজ চলছে, তাই স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে । ওপার বাংলায় পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, এপার বাংলায় বন্ধন অটুট।
প্রতি বছর বিশেষ এই দিনটি উদযাপিত হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতীতে ৷ এবারও তার অন্যথা হল না ৷ ‘মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা…’, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল…’, ‘আমি বাংলায় গান গাই…’ প্রভৃতি গানে গানে উদযাপিত হল মাতৃভাষা দিবস ।
গত 15 ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হয়েছেন ‘আমি বাংলায় গান গাই…’-এর স্রষ্টা প্রতুল মুখোপাধ্যায় । তাঁকেও স্মরণ করা হয় গানের মধ্য দিয়ে ৷ অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিশ্বভারতীতে পাঠরত বাংলাদেশী পড়ুয়ারাও ৷ গানে গানে প্রভাত ফেরির পর ইন্দিরা গান্ধি জাতীয় সংহতি কেন্দ্রে শহিদ বেদীর পাদদেশে সমবেত হন সকলে । বেদীতে পুষ্প দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বিনয় কুমার সরেন, বাংলাদেশ ভবনের সমন্বয়ক অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ-সহ বাকি অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা ৷
প্রসঙ্গত, 2017 সালে বিশ্বভারতীতে আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ ভবন নির্মাণ হয় ৷ বাংলাদেশ সরকারের 40 কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয়েছিল ভবনটি ৷ সেই বছর 25মে আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্বভারতীর আচার্য নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে হাতে এই ভবনের নক্সা তৈরি করেছিলেন ৷ তারপর থেকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ভবন প্রাঙ্গণেই উদযাপিত হয়ে আসছে ৷
কিন্তু, এবার স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে ৷ বাতিল করা হয়েছে সন্ধ্যানুষ্ঠানও ৷ প্রতি বছর বাংলাদেশ ভবনের প্রেক্ষাগৃহে বাংলাদেশী পড়ুয়াদের তত্ত্বাবধানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । এবার তা বাতিল করা হয়েছে । জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এবার স্থান পরিবর্তন করে ইন্দিরা গান্ধি জাতীয় সংহতি কেন্দ্র করা হয়েছে । যদিও, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাংলাদেশ ভবন সংস্কারের কাজ চলছে তাই স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে।
তবে, ওপার বাংলায় পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে দুই বাংলা এক ৷ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলাদেশের পড়ুয়ারা অংশ নিয়েছিলেন এদিনের অনুষ্ঠানে । প্রতি বছরই বিশ্বভারতীর বিভিন্ন বিভাগে ওপার বাংলার 40-50 জন পড়ুয়া গড়ে ভর্তি হন ৷ সেই পড়ুয়ারাই এদেশের মাটিতে উদযাপন করলেন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ৷
বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বিনয় কুমার সরেন বলেন, “খুব সুন্দর অনুষ্ঠান হল ৷ সংস্কার হচ্ছে তাই বাংলাদেশ ভবনের বদলে ইন্দিরা গান্ধি জাতীয় সংহতি কেন্দ্রে হল অনুষ্ঠানটি ৷ ওপার বাংলার পড়ুয়ারাও অংশ নিয়েছেন ৷ ওরাও খুশি, আমরাও খুশি ৷” বিশ্বভারতীর বাংলাদেশি পড়ুয়ারা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তাদের কথায় এটা একটা আলাদা অনুভুতি।