কলমে সমীর ঘোষ
দেখতে দেখতে তিন বছর পেরিয়ে গেল রক্তক্ষয়ী একটা যুদ্ধের।২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী ইউক্রেনে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে রাশিয়া। পাল্টা প্রতিরোধে নামে ইউক্রেন। হিসেব মত সেই যুদ্ধের তিন বছর পূর্তি রবিবার।দুই বছর ধরে চলা ভয়াবহ এ সংঘাতে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উভয় দেশেরই। এই যুদ্ধ ঘিরেই প্রায় ভাগাভাগি হয়ে গেছে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করা বিভিন্ন শক্তি। সংঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গোটা বিশ্ব।প্রভাব পড়েছে জ্বালানি তেল ও খাদ্য রফতানির ক্ষেত্রে। একদিকে বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম, অন্যদিকে দেখা দিয়েছে খাবারের সংকট। তবে এ যুদ্ধের চরম মাশুল গুনতে হচ্ছে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষকে।
কিন্তু কীভাবে এই যুদ্ধ থামবে তার কোনও সঠিক দিশার দেওয়াল লিখন এখনও স্পষ্ট নয়।তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ তিনি ক্ষমতায় এলেই থামিয়ে দেবেন এমনটাই ঘোষণা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।সেই লক্ষ্যে মসনদে বসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন ট্রাম্প। কিন্তু ক্ষমতায় এসে তিনি কার্যত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। জেলেনস্কিকে ‘ডিকটেটর’ অভিহিত করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়াটাই উচিত হয় নি।তাঁর নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া ট্রুথ-এ তিনি জেলেনস্কির বিরুদ্ধে একের পর তোপ দাগার পাশাপাশি আমেরিকার বিপুল অর্থ নষ্ট করানোর অভিযোগ তুলেছেন।তাঁর অভিযোগ জেলেনস্কি বাইডেন প্রশাসনকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে রাজি করিয়েছেন এমন এক যুদ্ধের জন্য যেখানে জেতা সম্ভব নয়।তাঁর অভিযোগ যে এতে ইউক্রেনের লক্ষ লক্ষ মানুষ অকারণে মারা গেছেন এবং এই ধ্বংসযজ্ঞ এখনও চলছে…। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে দেওয়া অর্থ খনিজ সম্পদের মালিকানা বা অন্য কিছুর মাধ্যমে ফেরতও চেয়েছেন ট্রাম্প।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। ট্রাম্পের অভিযোগ ইউক্রেনে নির্বাচন না করেই ক্ষমতা দখল করে রেখেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি।তাঁর দাবি জেলেনস্কির প্রতি ইউক্রেনের মানুষের সমর্থন মাত্র ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। জেলেনেস্কির প্রতি এমন ১৮০ ডিগ্রি অবস্থানে থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে গত মঙ্গলবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বৈঠক করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা।তবে ওই বৈঠকে ইউক্রেনের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। বস্তুত এই বৈঠক পাস কাটিয়ে গেছেন জেলেনস্কি। মঙ্গলবার তুরস্ক সফরে ছিলেন তিনি।সেখানে তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বুধবার জেলেনস্কির সৌদি আরব সফরে যাওয়ার কথা থাকলেও তুরস্কে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত তাঁর সৌদি আরব সফর স্থগিত থাকবে।
জেলেনস্কিকে সে ভাবে পাত্তা না দিলেও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। পুতিনের সঙ্গে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন।সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর বিশ্বাস মস্কো এই যুদ্ধের শেষ দেখতে চায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ইউক্রেন ও ইউরোপের অন্য দেশকে কার্যত সেভাবে পাত্তা দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প।আর ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ মোটেই ভালভাবে নিচ্ছে না ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার জানিয়ে দিয়েছেন যদি প্রয়োজন পড়ে তিনি ইউক্রেনে সাহায্য সেনাও পাঠাতে পারেন। কাজেই এমন পরিস্থিতিতে তিন বছরের মাথায় থাকা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কতটা থামার পথে এগোবে তা নিয়ে একটা বিরাট প্রশ্নচিহ্ন ঝুলেই থাকছে এখনও।