তেলঙ্গানার সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারে আরও জোরদার করা হয়েছে অভিযান। রাজ্য এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও নৌসেনার কম্যান্ডোদের যুক্ত করা হয়েছিল আগেই। এবার তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হলো আরও এক বিশেষ দল, যারা ২০২৩ সালে উত্তরাখণ্ডের সিলকিয়ারায় সুড়ঙ্গ দুর্ঘটনার সময় গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধারকাজ পরিচালনা করেছিল।
এই উদ্ধার অভিযানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সময়। দুর্ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও, আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। সুড়ঙ্গের অন্ধকারে আটকে থাকা ৮ জন শ্রমিক ও আধিকারিকের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রতিনিয়ত কমছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও সেনার একত্রিত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ধসে পড়া কংক্রিট, পাথর এবং জমে থাকা জল উদ্ধারকাজকে বারবার বাধাগ্রস্ত করছে।
নাগারকুর্নুল জেলার শ্রীসইলাম বাঁধের পাশে নির্মীয়মাণ ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গটি শনিবার সকালে ধসের কবলে পড়ে। সুড়ঙ্গের মধ্যে জল লিক করার খবর পেয়ে কিছু শ্রমিক সংস্কারের কাজে প্রবেশ করেছিলেন। তবে কাজ চলার সময়ই আচমকা সুড়ঙ্গের বাঁ দিকের একটি বড় অংশ ভেঙে পড়ে। যাঁরা ভিতরে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ কোনওভাবে বেরিয়ে এলেও ৮ জন শ্রমিক ও আধিকারিক আর বেরিয়ে আসতে পারেননি।
উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে সেই শনিবার সকাল থেকেই। একের পর এক বিশেষ বাহিনী কাজে যোগ দিলেও পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। উদ্ধারকারী দল সূত্রে জানা গিয়েছে, সুড়ঙ্গের প্রায় ১৩ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত ধস নেমেছে। উদ্ধারকারী দল সুড়ঙ্গের শেষের ১০০ মিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেও, সেখানে জমে থাকা কাদা, ধসে পড়া মাটি এবং জল তাঁদের আটকে রেখেছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো, সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে একাধিকবার বড় পাথর ভেঙে পড়ার শব্দ পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুড়ঙ্গের ভেতরের অংশ এখনও অত্যন্ত নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে, যা যেকোনো মুহূর্তে নতুন করে ধসে পড়তে পারে। ফলে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হচ্ছে উদ্ধারকারী দলকে।
পরিস্থিতির উপর সরাসরি নজর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পাশাপাশি লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীও। আটকে পড়াদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় কোনওরকম ফাঁক রাখা হচ্ছে না, তবে প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে উদ্ধারকাজ ধীরগতিতে এগোচ্ছে। সময় যত গড়াচ্ছে, ততই চাপ বাড়ছে উদ্ধারকারী দলের ওপর। আটকে থাকা শ্রমিকদের জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে কি না, সেই প্রশ্নই এখন সবার মনে।
Leave a comment
Leave a comment