ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তেজনা কমানো, শত্রুতার দ্রুত সমাপ্তি এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের একটি খসড়া প্রস্তাবে রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । অথচ ওয়াশিংটন অতীতে কিয়েভের পক্ষে এবং মস্কোর নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাবের পক্ষেই ভোট দিয়েছিল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসতেই আমেরিকার অবস্থান ঘুরে গেছে ১৮০ ডিগ্রি। গোটা ব্যাপারটা কিয়েভের জন্য বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে।
১৯৩ সদস্যের রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ ইউক্রেন এবং তার ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোর উত্থাপন করা ‘ অ্যাডভান্সিং আ কম্প্রিহেনসিভ, জাস্ট এন্ড লাস্টিং পিস ইন ইউক্রেইন্’ বা ‘ইউক্রেনে একটি ব্যাপক, ন্যায়সঙ্গত এবং স্থায়ী শান্তি অগ্রগতি’ শীর্ষক খসড়া প্রস্তাবের উপর ভোট দেয়। যার মধ্যে ৯৩টি ভোটের পক্ষে, ৬৫টি ভোটদান থেকে বিরত এবং ১৮টি ভোটের বিপক্ষে গৃহীত হয়।
রাশিয়ার মিত্র দেশ বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া এবং সুদান প্রস্তাবটিতে কিয়েভের বিপক্ষে এবং মস্কোর পক্ষে ভোট দেয়। ভারত সবসময় আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমে সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। তাই ভোটদান থেকে বিরতই থেকেছে ইন্ডিয়া।
এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তন। অতীতে ওয়াশিংটন কিয়েভের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল এবং মস্কোর নিন্দা করেছিল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যকার বাকযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এবার তারা ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। গত মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। গত সপ্তাহে, তিনি ইউক্রেনের জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরশাসক’ বলে অভিহিত করেন এবং দাবি করেন যে তিনি অত্যন্ত অ-জনপ্রিয়। তিনি তাকে যুদ্ধ শেষ করতে দ্রুত এগিয়ে আসতেও বলেন ট্রাম্প।
পাশাপাশি গত মঙ্গলবার সৌদি আরবে মার্কিন ও রাশিয়ান কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার পর ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘অর্থহীন’ বলে অভিহিত করেন এবং জোর দিয়ে বলেন যে এটি হওয়াই উচিত ছিল না।রাশিয়ার দিকে সুর টেনে ট্রাম্প বলেন, “রাশিয়া কিছু করতে চায়। তারা সেখানে যে বর্বরতা চলছে তা বন্ধ করতে চায়। সপ্তাহে সপ্তাহে হাজার হাজার সৈন্য নিহত হচ্ছে। রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় সৈন্যদের পাশাপাশি অনেক কোরিয়ান নিহত হয়েছে।”
রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর আদেশ দেওয়ার পর থেকে ওয়াশিংটন কিয়েভকে ৬০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সামরিক সহায়তা দিয়েছে। গত ডিসেম্বরে, জেলেনস্কি বলেছিলেন যে যুদ্ধে ৪৩,০০০ ইউক্রেনীয় সৈন্য এবং ১,৯৮,০০০ রাশিয়ান সৈন্য নিহত হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের অনুমান অনুযায়ী, ইউক্রেনে প্রায় ১২,৫০০ অসামরিক লোক প্রাণ হারিয়েছে।