সিপিএমের ২৭ তম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্মেলনের প্রতিনিধি অধিবেশনের সমাপ্তির পর ডানকুনি ফুটবল ময়দানে প্রকাশ্য সমাবেশে প্রকাশ কারাত বলেছেন, পার্টির ২৪ তম কংগ্রেস এপ্রিলে মাদুরাই শহরে হবে। তার আগে গোটা দেশ জুড়ে বিভিন্ন রাজ্যের সম্মেলন চলছে। এই রাজ্যের ডাকুনিতে চারদিন এই রাজ্য সম্মেলন অনু্ঠিত হয়েছে। সম্মেলন সফল করতে হুগলির মানুষ যেই সমর্থন জানিয়েছেন তার জন্য সবাইকে কৃতজ্ঞ।
এই সমাবেশ প্রমাণ করে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) হুগলি জেলার মানুষের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে চলছে। পার্টির জেলা কমিটিকে এর জন্য অভিনন্দন জানাই।
তিনি বলেন, গত সম্মেলন থেকে এই সম্মেলন পর্যন্ত দলীয় কর্মীরা সাহসের সাথে কাজ করেছেন সব প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে। গরীবের দাবি দাওয়া নিয়ে লড়াই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পার্টি কর্মীরা। অনেক দমন পীড়নকে সহ্য করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। বিজেপির সাম্প্রদায়িক নীতি এবং তৃণমূলের অপশাসনের বিরুদ্ধে চলছে লড়াই। গোটা দেশে আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছি। কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে চলছে লড়াই। দেশের সংবিধান শেষ করার জন্য বিজেপির যেই ভূমিকা তার বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি গুলোকে সাথে নিয়ে আমরা লড়াই চালাচ্ছি। রাজ্যে তৃণমূলের যেই সরকার চলছে তা দুর্নীতিগ্রস্থ। এই সরকারের যেই জনবিরোধী চরিত্র তার বিরুদ্ধে চলছে লড়াই, তার সাথে বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। কারাত আরও বলেছেন, গত তিন বছর বাংলার মানুষ ১০০ দিনের কাজ পাচ্ছেন না। তাদের কাজের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এটা কখনো মেনে নেওয়া যায়না। কাজের অধিকার আইন সবার জন্য। কিন্তু মমতার সরকার সেই আইনকে উপেক্ষা করছে। হাজার হাজার কোটি টাকার যেই ক্ষতি মানুষের হয়েছে তা পূরণ করতে হবে। মহিলাদের নিরাপত্তা নেই রাজ্যে। চারদিন এই রাজ্যের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় দেখেছি নারী নির্যাতনের খবর। এই জেলারই এক মহিলার গতকাল মৃত্যু হয়েছে কটূক্তির হাত থেকে বাঁচতে। এর থেকে নিন্দনীয় কিছু হতে পারে না। আর জি কর কাণ্ড গোটা দেশ দেখেছে। এই গুন্ডা রাজের বিরুদ্ধে আমাদের পার্টি সামনে থেকে লড়াই করবে। এই বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছিল আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে, আজ মানুষের বিরুদ্ধে তাদের ব্যাবহার করা হচ্ছে। এই সম্মেলন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তৃণমূলের অপশাসন এবং বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।
রাজ্যে বামপন্থীরা শক্তি শালী ছিল বলে কোন সাম্প্রদায়িক শক্তি অতীতে মাথা তুলতে পারেনি। আজ তৃণমূলের জন্য এমন এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে যাতে বিজেপি আরএসএস শক্তি শালী হয়েছে। আরএসএস এই রাজ্যকে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তির ঘাঁটি করতে চাইছে। মোহন ভগবৎ এই রাজ্যে এসেছিলেন, কি ভাবে আর এস এস কে শক্তিশালী করা যায়।
মোদী সরকার মুখে হিন্দু বলছে কিন্তু ওরা আদতে আদনি আম্বানিদের জন্য কাজ করে। বিজেপি এই রাজ্যে এলে এই কর্পোরেট শক্তি বাংলাকে লুঠ করবে। এই সমাবেশ প্রমাণ করছে রাজ্যের মানুষ বামপন্থী বিকল্প শক্তিকে দেখতে চাইছে।
এই সমাবেশের মঞ্চে মহম্মদ সেলিম বলেন, আজকের সমাবেশ প্রমাণ করছে সিপিআইএম ছিল,আছে আর থাকবে। কিছু এনজিও, মিডিয়া ভেবেছিল আমাদের মুছে দেওয়া যাবে, কিন্তু না। শহীদের কলজের রক্ত দিয়ে লাল ঝান্ডা তৈরি হয়েছে। কৃষক, সংখ্যালঘু, সবার জন্য লড়াই করে সিপিআই এম তৈরি হয়েছে। ৫৫০’র বেশি প্রতিনিধি সম্মেলনে ছিলেন। সমাজের সব অংশের মানুষ ছিলেন। পাহাড় থেকে এসেছিলেন অনেকে। যারা ভেবেছিল সিপিআই এম শেষ তারা লিখছে কি খাওয়া হয়েছে সম্মেলনে। আর যখন ফাইভ স্টার হোটেলে হয়, দিল্লি নবান্ন থেকে উপহার আসে তখন কিছু হয় না। তার বন্দনা করা হয় আমরা মানুষকে নিয়ে লড়াই করি, তাদের থেকে রসদ জোগাড় করি। আমরা ইলেক্টোরাল বন্ড নি না। মানুষের টাকায় পার্টি চালাই।
ওরা বিভিন্ন সংস্থার থেকে টাকা নিয়েছে ভোটের সময় আর আমাদের তার ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। আমরা মামলা করেছিলাম। তারপর যখন নাম প্রকাশের কথা এলো বললো নাম দেবে না। মোদী সরকার আড়াল করতে চেয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের কোথায় নাম প্রকাশ করেছে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চেয়েছিলেন রাজ্যের মানুষের মেধা দিয়ে রাজ্য গড়তে। বামফ্রন্টের সময় স্কুল হয়েছে, তৃণমূল স্কুল তুলে দিচ্ছে। বিজেপি বলছে বিকাশ, মোদী বলছে উন্নয়ন একই কথা সাইন বোর্ড আলাদা। আর জি কর কাণ্ড দেখিয়ে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ আর সিবিআই’য়ের রূপ। দিল্লি থেকে কলকাতা সত্য প্রকাশ করতে চায় না। আমরা বলছি সব প্রকাশ করতে হবে। এই চন্দননগরে একজন নারীর মৃত্যু হয়েছে। মমতা কিছু বলছে না। আমি এবং মীনাক্ষী সভাশেষে চন্দননগরে ওই মেয়েটির বাড়ি যাবো। গত তিন বছর মানুষকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেছি। ওরা মানুষকে ভাগ করতে চাইছে। দাঙ্গা হাঙ্গামা করছে। যে দাঙ্গা করলো তাকে মোদী পদ্মশ্রী দিল। আমাদের এর বিরুদ্ধেই লড়াই করতে হবে।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন দাঙ্গাবাজদের মাথা গুড়িয়ে দিতে হবে। আমরা বলছি গুন্ডা দাঙ্গাবাজের কোন স্থান হবে না এই রাজ্যে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দাঙ্গা হয়েছে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কোন দাঙ্গা করতে দেওয়া হবে না। ধর্ম আর রাজনীতিকে আলাদা রাখতে হবে। বাংলাদেশে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘু, বিরোধী দলের লোকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন। আমার আমাদের দেশেও এই ঘটনা দেখেছি। বাংলাদেশে যারা সংখালুগুদের হয়ে লড়ছে আমরা তার পাশে। এই রাজ্যে আমাদের সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আমাদের দেশ বহুত্ববাদী। আরএসএস গোটা দেশে জাত নিয়ে বিভাজন করছে। আর মমতা বলেছিল আমাদের বিরুদ্ধে বিজেপিকে নিয়ে লড়াই করবে। আজ ওরা জোট করে চেপে বসেছে। বিজেপিকে দিয়ে তৃণমূলকে হটানো যাবে না, আর জি কর প্রমাণ করেছে। মোহন ভগবৎ বললো এই বিষয় তারা রাজ্যকে সমর্থন করবে, তার পর থেকে এক রিপোর্ট, একে এক করে সবাই ছার পাচ্ছে। জিনিসের দাম বেড়েছে। কৃষকেরা দাম পাচ্ছে না। আচ্ছেদিন না সর্বনাশ ডেকে এনেছে মোদী মমতা। আগামী ২০ এপ্রিল ব্রিগেড সমাবেশ, গরিব মানুষের সমাবেশ হবে। আগামী ২০ এপ্রিল ব্রিগেড ভরানোর আগে নিজের পাড়ায় মহল্লায় লড়াই হবে প্রতিদিন লড়াই হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বলেছিলাম চোর ধরো জেল ভরো, সেই নির্বাচনে প্রতিরোধের স্পৃহা জেগেছিল। বাইনারী ভেঙে গিয়েছিল। সিপিআই(এম)কে শক্তিশালী করতে হবে, বামপন্থী ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। মানুষকে সাথে নিয়ে আমাদের চলতে হবে। মানুষ আমাদের পাশে এসেছে। ২৬ থেকে ২৬ এর লড়াই শুরু করবো আমরা।