গোটা পৃথিবীতে বাণিজ্য বিস্তার করতে গেলে শুল্ক বা ট্যাক্স যে কত বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে তা ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। ওয়াশিংটনের মসনদে বসতে না বসতেই শুরু করে দিয়েছেন শুল্ক যুদ্ধ। বন্ধু দেশ হলেও সেই হুঁশিয়ারি থেকে বাদ যায় নি মোদীর ভারতও। তবে ভারত সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সেই শুল্ক নীতি নিয়েই বৈঠক করলেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন।
গত কয়েক বছর ধরেই ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)একটি ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার পথে এগোতে চাইছে। এবারের বৈঠকে তারই অগ্রগতি হল অনেকটা। শুক্রবার মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর উরসুলা জানিয়েছেন যে চলতি বছরের শেষেই দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সই হতে পারে। ভারত এবং ইইউ-এর মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার এটিই প্রথম প্রচেষ্টা নয়। এক দশক আগে একটি চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু ২০১৩ সালে আলোচনা থমকে যায়। ২০২১ সালে আরেকটি চেষ্টা করা হয় এবং তা তখন থেকেই চলছে—উভয় পক্ষই নিজেদের জন্য সর্বোত্তম ফলাফল অর্জনে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
শুক্রবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেন-এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।তিনি বলেন ভারত-ইইউ সম্পর্ক কেবল বাণিজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়াকে সম্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী মোদি জানান, “আমরা বাণিজ্য, প্রযুক্তি, বিনিয়োগ, উদ্ভাবন, সবুজ প্রবৃদ্ধি, নিরাপত্তা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং গতিশীলতার ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য একটি রূপরেখা প্রস্তুত করেছি।”
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, যেখানে ২০২৩-২৪ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৩৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। শুধুমাত্র গত এক দশকেই—২০১৪ সাল থেকে—ভারত-ইইউ বাণিজ্য ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী ১০-১৪ মার্চ ব্রাসেলসে হবে ভারত-ইইউ-এর বাণিজ্য বৈঠক। সেই বৈঠকের আগে দু’পক্ষই বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তির পাশাপাশি ভৌগোলিক বাণিজ্যের মানচিত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য আলোচনার অগ্রগতির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এদিন প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, “আজ আমরা ২০২৫ সালের পরের সময়ের জন্য ভারত-ইইউ অংশীদারিত্বের একটি সাহসী এবং বড় রোডম্যাপ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি পরবর্তী ভারত-ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে চালু করা হবে।”
তবে প্রতিবারই ভারত-ইইউ সামগ্রিক চুক্তি সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হলে তা কোনও না কোনও বাধার সম্মুখীন হয়েছে। ইউরোপ গাড়ি, বাইক এবং হুইস্কি ও ওয়াইনের উপর শুল্ক কমানোর দাবি করছে, অন্যদিকে ভারত চায় ইউরোপ যেন ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোকে সাশ্রয়ী মূল্যের ওষুধ এবং রাসায়নিক সরবরাহের জন্য ইউরোপ জুড়ে আরও বেশি সরবরাহের সুবিধে দেয়। এবার দুই নেতৃত্বই বলেছেন যে তাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে আন্তরিক ও অর্থপূর্ণ আলোচনা করেছেন। দুই নেতৃত্বই মনে করছে ভারত-পশ্চিম এশিয়া-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর (আইএনইসি) নির্মাণ প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবার দৃঢ় পদক্ষেপ করা হবে। ওই করিডর নির্মিত হলে বিশ্বের বাণিজ্যিক মানচিত্রে বড় বদল হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
Leave a comment
Leave a comment