ভারতের বামপন্থী রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের নাম বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আজ তাঁর জন্মদিনে পশ্চিমবঙ্গ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে এক সৎ, আদর্শবান ও সংস্কৃতিমনস্ক রাজনীতিককে, যিনি প্রশাসনের দায়িত্বে থেকে রাজ্যের ভবিষ্যৎ বদলানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তাঁর প্রয়াণ রাজনীতির অঙ্গনে এক গভীর শূন্যতা তৈরি করেছে, তবুও তাঁর চিন্তাধারা ও নেতৃত্ব আজও সময়োপযোগী।
১৯৪৪ সালের ১ মার্চ জন্ম নেওয়া বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছাত্রজীবন থেকেই বামপন্থী আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময়েই রাজনীতির প্রতি তাঁর ঝোঁক তৈরি হয়। ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-তে যোগ দেওয়ার পর ধীরে ধীরে তিনি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে ওঠেন। ২০০০ সালে জ্যোতি বসুর উত্তরসূরি হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এক দশক সেই পদ সামলান।
তাঁর শাসনকাল রাজ্যের শিল্পায়নের প্রয়াসের জন্য বিশেষভাবে আলোচিত। টাটার ন্যানো প্রকল্প থেকে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের জমি অধিগ্রহণ ইস্যু— সবই পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দিক পরিবর্তন করে। শিল্পগঠনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখলেও, জমি আন্দোলনকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক ও রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে সেই উদ্যোগ সফল হয়নি। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের পরাজয়ের পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন, কিন্তু দলের প্রতি তাঁর আনুগত্য অটুট ছিল।
শুধু রাজনীতিতেই নয়, সংস্কৃতির প্রতিও গভীর অনুরাগ ছিল তাঁর। সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র— সব ক্ষেত্রেই তাঁর দখল ছিল অসামান্য। তিনি নিজেও কবিতা লিখতেন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। অসুস্থতা বাড়তে থাকায় তিনি জনজীবন থেকে দূরে সরে যান, কিন্তু তাঁর চিন্তাভাবনা আজও বহু মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বামপন্থী রাজনীতি রাজ্যে অনেকটাই দুর্বল, তবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো নীতিনিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা এখনো অনুভূত হয়। সততা, দায়বদ্ধতা এবং উন্নয়নমুখী দৃষ্টিভঙ্গি— এসবই আজকের রাজনীতিতে দুর্লভ হয়ে উঠেছে।
তাঁর জন্মদিনে যখন তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হচ্ছে, তখন রাজনীতির মঞ্চে তাঁর অনুপস্থিতি আরও প্রকট হয়ে ওঠে। কিন্তু নীতি ও আদর্শের যে বার্তা তিনি রেখে গেছেন, তা আগামীতেও বহু মানুষের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।
Leave a comment
Leave a comment