‘আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে আছি’, আগে এই ধরণের প্রতিশ্রুতি দিতেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন,এবার সেই সুর শোনা গেল ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের গলায়। তুমল তর্কের পর আমেরিকা ও ইউক্রেনের খনিজ চুক্তি ভেস্তে যাওয়ায় পরেই সেখান থেকেই ব্রিটেনে যান জেলেনেস্কি। সেখানে তাঁকে সাদরে অভ্যর্থনা জানান ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী । ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সামনেই তাঁকে জড়িয়ে ধরেন স্টারমার। আশ্বাস দেন যে ব্রিটেনের সমর্থন রয়েছে কিয়েভের পাশেই। বলেন, ”আমরা সব সময়ই ইউক্রেনের পাশে আছি।” শুধু তাই নয় ইউক্রেনীয় সেনার শক্তিবৃদ্ধিতে সহায়তা করতে এদিন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ২.২৬ বিলিয়ন পাউন্ডের এক ঋণের চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছে ব্রিটেন প্রশাসন। এর আগেও ইউক্রেনের পাশে দাড়িয়ে প্রয়োজনে সেদেশে সেনা পাঠানোর কথা জানিয়েছিলেন স্টারমার। কদিন আগেই ট্রাম্প স্টারমার বৈঠকে স্টারমার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন যেকোনো ইউরোপীয় বাহিনী, যারা ইউক্রেনে সম্ভাব্য শান্তিরক্ষার কাজ করবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অন্যদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় স্টারমার ইঙ্গিত দেন যে ব্রিটেন ইউক্রেনে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াবে। এছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা সফল হলে ইউরোপ কিয়েভকে সমর্থন এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে বলেও জানানো হয়।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে নজিরবিহীন বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি। পরিস্থিতি এমন হয় যে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে মার্কিন দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার চুক্তি সইয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বাতিলই করে দেওয়া হয় যৌথ সংবাদ সম্মেলন। সংবাদমাধ্যম সুত্রে খবর এর পরই হোয়াইট হাউস থেকে জেলেনস্কিকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
আর এই বৈঠকের পর পরই বিশ্ব ক্ষমতার ভরকেন্দ্র অনেকটাই টলে গেল বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার হামলার পর যুদ্ধ সহায়তা হিসেবে ইউক্রেনকে লক্ষ লক্ষ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে জো বাইডেনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই বিপুল সহায়তা পাঠানোর ঘোর বিরোধী ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশেই দাড়ান। ইউক্রেনকে বাদ দিয়েই প্রাথমিক ভাবে তিনি শান্তি আলোচনা শুরু করেন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে কিয়েভ যেমন ক্ষুব্ধ হয় তেমনই হতবাক হয়ে যায় ইউরোপের দেশগুলো।
ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বাগ্বিতণ্ডার পর এবার সম্ভবত দ্রুত ইউক্রেনকে মার্কিন সাহায্য বন্ধের পথে হাঁটবেন ট্রাম্প। পুতিনের দেশের সঙ্গে যুদ্ধ চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন বা সাহায্য ছাড়া ইউক্রেনের জন্য ‘কঠিন’ হয়ে যাবে বলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জানিয়েছেন জেলেনেস্কি। অন্যদিকে জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের শুক্রবারের ওই বৈঠককে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওই বৈঠকের পরপরই ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ দ্রুত ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছেন।
কাজেই ট্রাম্প ক্ষমতায় আসতেই বদলে যেতে বসেছে গোটা বিশ্বের শক্তিকেন্দ্রের ভরকেন্দ্র। বাইডেনের সাহায্যে ও সমর্থনে তিন বছরে গড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন জোট এখন প্রায় টুকরা হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্পর্কের এমন প্রকাশ্য ভাঙন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের বড় সমস্যা বেঁধে যাওয়ার ইঙ্গিতও বটে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্প যেভাবে সম্পর্ককে আরও মসৃণ করছেন তাতেই এসব উদ্বেগ জন্ম নিচ্ছে।
Leave a comment
Leave a comment
