ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে ইউক্রেনের প্রতি ট্রাম্পের মনোভাব। বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়বস্তু ইউক্রেনের প্রতি ট্রাম্পের মনোভাব। কিভাবে ট্রাম্প এবং তাঁর সঙ্গীরা জেলেনস্কির উপর রেগে গিয়েছিলেন, সেই দৃশ্য টিভির পর্দায় দেখেছেন সকলেই। এই ঘটনার অনেক অর্থ রয়েছে, বিশেষ করে ভারতের জন্য। পুতিনের এই তত্ত্বের সঙ্গে ট্রাম্প একমত। প্রাক্তন ইউএসএসআর সদস্য রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্ব সীমিত বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু পুতিনের জন্য যা সঠিক, তা গণতান্ত্রিক দেশগুলির জন্য নিয়ম হতে পারে না।
যখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গণতন্ত্র, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সীমান্ত আন্তঃসীমান্ত আগ্রাসনকে হালকা করে দেখে, তখন এটি নিঃসন্দেহে বিপজ্জনক। অর্থাৎ, একটি দেশ অন্য একটি দেশ দখল করতে পারে। ভারত তার পূর্ব প্রতিবেশীর সম্প্রসারণবাদী নীতি এবং পশ্চিম সীমান্তে রাষ্ট্র-স্পন্সরিত সন্ত্রাসবাদের মুখোমুখি হয়েছে। অতএব, ট্রাম্পের মনোভাব ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
যখন একজন শক্তিশালী নেতা অন্য দেশের সীমানা লঙ্ঘন করেন, তখন এর অনেক গুরুতর পরিণতি তৈরি হয়। আর তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেই।
ইতিহাস সাক্ষী আছে, যুদ্ধবিরতি মানে শান্তি নয়। যখন ক্ষুব্ধ জাতি তার স্বাধীনতা এবং সীমান্তের নিরাপত্তার উপর জোর দেয়, তখন যুদ্ধরত জাতিগুলির মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যস্থতা কেবল ধমক দেওয়া কিংবা সংলাপ বা প্রলাপ নয়। বিশ্ব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রয়েছে আমেরিকার। নেপথ্যে সেদেশের ক্ষমতা। আমেরিকাই পারে ঘটনার গতিপথ পরিবর্তন করতে।
ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা পরে প্রায় প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল ঠিকই কিন্তু তা ছিল সত্যি লজ্জাজনক। শান্তি প্রতিষ্ঠাকে একটি রিয়েল এস্টেট চুক্তির মতো উপস্থাপন করেছিলেন তিনি। ইউক্রেন ইস্যুতে তাঁর পদক্ষেপ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তাতে অবশ্য পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। যদি ট্রাম্প প্রশাসন জাতীয় সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘনকে হালকাভাবে নিতে থাকে, তাহলে ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড এবং তাঁর ভবিষ্যতের পদক্ষেপের উপর কড়া নজর রাখতে হবে ভারতকে। এর ফলে কী পরিণতি হতে পারে তা বুঝতে হবে আমাদের। বিশ্বের অনেক দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে ট্রাম্পের মনোভাব।
এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে ভারতকে। প্রয়োজনে দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। ভারতকে আন্তর্জাতিক ফোরামে এই বিষয়ে আওয়াজ তুলতে হবে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে যাতে সমস্ত দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা যায়। এটি কেবল ইউক্রেনীয় সমস্যা নয়, বরং আন্তর্জাতিক আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্ন। আজ ইউক্রেনের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটছে, আগামীকাল যে অন্য যেকোনো দেশের সঙ্গে একই ঘটনা ঘটবে না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই এই বিষয় নিয়ে নীরব থাকার কোন প্রশ্নই ওঠে না।