মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই কানাডা, মেক্সিকো ও চিনের পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ করার হুমকি দিয়ে চলছিলেন। সোমবার তা কার্যকর করার ঘোষণা হতেই বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারগুলি ধসে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন, মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে। অবৈধ সীমান্ত পারাপার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল সরবরাহের বিষয়ে ৩০ দিনের বিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এই শুল্ক কার্যকর হবে। এছাড়াও, ট্রাম্প চিনের উপর আরোপিত শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার ঘোষণা করেছেন।
ট্রাম্পের ট্যাক্সের জেরে বাজারের অবস্থা
সোমবার ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে উত্তর আমেরিকায় বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করেছে এবং আর্থিক বাজারগুলিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই ঘোষণার পরই মার্কিন শেয়ার বাজার তীব্রভাবে নিম্নমুখী হয়ে পড়ে, পাশাপাশি মেক্সিকান পেসো এবং কানাডিয়ান ডলারের মানও পড়ে যায়। ধাক্কা লেগেছে ভারতীয় শেয়ার বাজারেও। ট্রাম্পের মন্তব্যের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রধান সূচক ধসে পড়েছে। ডাউ জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ৬৪৯.৬৭ পয়েন্ট বা ১.৪৮ শতাংশ, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ১০৪.৭৮ পয়েন্ট বা ১.৭৬ শতাংশ এবং ন্যাসড্যাক কম্পোজিট ৪৯৭.০৯ পয়েন্ট বা ২.৬৪ শতাংশ কমেছে। এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বাজারেও প্রভাব পড়েছে, টোকিও, হংকং এবং সিডনির শেয়ারগুলি নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। ভারতীয় শেয়ার বাজারও মঙ্গলবার এশিয়ান বাজারের জেরে নিম্নমুখী হয়ে খুলেছে। নিফটি ৫০ সূচক ০.৬৪ শতাংশ কমে ২১,৯৭৯.৮৫ এবং বিএসই সেনসেক্স ০.৪৫ শতাংশ কমে ৭২,৭৫৩.৬৪ পয়েন্টে পৌঁছেছে।
কানাডা, মেক্সিকো ও চিনের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের জেরে বিশ্ববাজারে চড়া প্রভাব পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। আসবে নানা পাল্টা ব্যবস্থাও। যদিও মেক্সিকোর অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে যে প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউমের মঙ্গলবারের সকালের প্রেস কনফারেন্সের আগে কোনও সরকারী প্রতিক্রিয়া জানানো হবে না। সোমবার তিনি একটি পাবলিক ইভেন্টে বলেছেন, “মেক্সিকোকে সম্মান করতে হবে।” তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা করে বলেছেন, “আমাদের প্ল্যান বি, সি, ডি রয়েছে।” কানাডার বিদেশমন্ত্রী মেলানি জোলি বলেছেন যে তাঁরাও পাল্টা পদক্ষেপ করতে প্রস্তুত। তবে তা কী হতে চলেছে তাঁর কোনও নির্দিষ্ট বিবরণ তিনি দেননি। অন্টারিও প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড বলেছেন, মার্কিন শুল্ক এবং কানাডার প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা উভয় দেশের জন্যই ‘একটি সম্পূর্ণ বিপর্যয়’ হবে। তিনি বলেছেন, “আমি প্রতিক্রিয়া জানাতে চাই না, কিন্তু আমরা এমনভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব যা তারা আগে কখনও দেখেনি।” অন্যদিকে চিনের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস বলেছে যে বেইজিং প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে, যা সম্ভবত মার্কিন কৃষি ও খাদ্য পণ্যকে লক্ষ্য করবে।
বিশ্ব কী তবে বাণিজ্য যুদ্ধের পথে হাঁটছে?
ট্রাম্প প্রথম থেকেই গর্ব করে বলে আসছেন, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এই ট্যাক্স আরোপের বিষয়টি মার্কিন অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেবে। তবে ট্রাম্পের এই যুক্তির সঙ্গে একমত নন অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ। অনেক অর্থনীতিবিদ ইতিমধ্যেই বলেছেন, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের এই সিদ্ধান্তে মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে।এমন মত জানিয়েছেন অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী জোসেফ স্টিগলিৎজ। ট্রাম্পের ট্যাক্স নীতি অর্থনৈতিক বৃদ্ধি কমিয়ে দেবে। অনেকে মনে করছেন, শুল্কের প্রভাব আমেরিকা তো বটেই, বিশ্বের জন্যও খুব খারাপ হবে। ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি অসম্ভব কিছু নয়।