ভারতে দারিদ্র্য কমার হার নিয়ে নতুন পরিসংখ্যান সামনে আনলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শমিকা রবি। তাঁর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০১১-১২ থেকে ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচ থেকে বেরিয়ে এসেছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করছে, দেশ অর্থনৈতিকভাবে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে দাবি করেছিলেন, তাঁর সরকার বিগত দশ বছরে ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যের অন্ধকার থেকে বের করে এনেছে। তবে এই তথ্য নিয়ে বিতর্ক ছিল। নীতি আয়োগের বহুমুখী দারিদ্র সূচক অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শুরুতে জানানো হয় যে, মোদী সরকারের শাসনকালে ২৪.৯ কোটি মানুষ দরিদ্রতার সীমা অতিক্রম করেছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী এই পরিসংখ্যানকে প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার করেন। তবে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছে, এই হিসাব কতটা বাস্তবসম্মত?
সমালোচকদের দাবি, আন্তর্জাতিকভাবে দারিদ্র্য নিরূপণের জন্য নির্দিষ্ট কিছু সূচক রয়েছে, কিন্তু ভারত সরকার নিজস্ব কিছু মাপকাঠি যুক্ত করেছে, যা প্রকৃত অবস্থা বোঝার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, জনধন যোজনার অধীনে খোলা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলোকেও দারিদ্র্য নিরসনের সূচক হিসেবে ধরা হয়েছে, যদিও বাস্তবে বহু অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় পড়ে রয়েছে। তাই সরকারের দাবি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
ভারতে দারিদ্র্য পরিমাপের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। আগে অর্থনীতিবিদ সুরেশ তেন্ডুলকরের মডেল অনুযায়ী, শহরে প্রতি মাসে ৫৭৯ টাকা ও গ্রামে ৪৪৭ টাকার নিচে খরচ করলে সেই পরিবার দরিদ্র হিসেবে গণ্য হতো। পরে অর্থনীতিবিদ সি রঙ্গরাজনের প্রস্তাবিত নতুন মাপকাঠিতে এই সীমা বাড়িয়ে শহরে ১,৪০৭ টাকা ও গ্রামে ৯৭২ টাকা করা হয়। শমিকা রবির মতে, এই মাপকাঠির ভিত্তিতে হিসাব করলেই দেখা যায়, গত এক দশকে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১১-১২ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৯.৫%, যা ২০২৩-২৪ সালে এসে কমে ৪%-এ দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও দারিদ্র্যের হার কমে ৩০.৪% থেকে ৬%-এ নেমেছে বলে জানিয়েছেন শমিকা রবি। তাঁর মতে, “এটি শুধু পরিসংখ্যান নয়, বাস্তবে দেশের আর্থিক অগ্রগতির প্রতিফলন। গত এক দশকে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এটি অন্যতম বড় সাফল্য।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল এ বিষয়ে জানিয়েছেন, “সরকার শুরু থেকেই গরিব মানুষের কাছে সরাসরি সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। এরই সুফল হিসেবে কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার বাইরে আসতে পেরেছে, যা ভারতের উন্নয়নের একটি বড় পদক্ষেপ।”
Leave a comment
Leave a comment