অভিজিৎ বসু
উন্নয়ন আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে নেই। উন্নয়নকে খুঁজে পেতে গেলে এখন সোজা চলে যেতে হবে দেউচা পাঁচামিতে। হ্যাঁ, এটাই এখন আপাতত আমাদের উন্নয়নের ঠিকানা। শান্তিনিকেতনের শ্যামবাটির মোড় নয়, রতনপল্লীর মাঠ নয়, খোয়াই এর আশপাশেও আর তাকে দেখা যায়না কিছুতেই কোনো ভাবেই। কোপাই নদী পেরিয়ে, সিউড়ির পূরন্দরপুর এর যানজট এড়িয়ে, তিলপাড়ার ব্যারাজ পার করে সোজা সে এখন দেউচা পাঁচামির কয়লা প্রকল্পে হাসি হাসি মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে নিশ্চিন্তে ঘুরছে সেটা বলা যাবে না কিছুতেই। মাঝে কিছু ঝুট ঝামেলা হচ্ছে, অশান্তি হচ্ছে, চরকা কাটা হচ্ছে, উন্নয়ন আটকাতে কতই না ফন্দি আর ফিকির হচ্ছে চারিদিক জুড়েই। রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে পড়ে যাতে আটকে যায় এই উন্নয়নের জোয়ার আর এই উন্নয়নের রথের চাকা। ঠিক ওই মহাভারতের যুদ্ধ ক্ষেত্রে কর্ণের রথের চাকা আটকে যাওয়ার মতই। তার জন্যে কম চেষ্টা করছে না কেউ কেউ এখন।
এক সময়ের দাপুটে ৩৪ বছরের সেই রক্ত চক্ষুর বামশাসন আমলের লাল চা খাওয়া সব সর্বহারা পার্টির মলিন পোশাকের নেতারা এই উন্নয়ন নিয়ে কটাক্ষ করতে কসুর করছেন না তাঁরাও। আলিমুদ্দিন এর ঘেরা টোপে বসে সাংবাদিক বৈঠক করে হাসি হাসি মুখে নানা কথা বলছেন মহম্মদ সেলিম। যে লাল পার্টির দাপটে এই বীরভূমের বীর সন্তান চোখে সর্ষে ফুল দেখতেন একসময়। লাল মোরাম রাস্তায় শুধুই লাল আর লাল এর ছোপ ছোপ রক্তের দাগ দেখা যেতো গোটা জেলা জুড়েই। কখনও সূচপুর, কখনও নানুর এর লাল টকটকে স্মৃতি এখনও দগদগে ঘা হয়ে ফুটে আছে চারিদিক জুড়েই। সেই স্মৃতিকে বুকে আগলে নিয়েই তো বেঁচে থাকা। সেই স্মৃতিকে নিয়েই তো রাস্তার পাশে একদিন উন্নয়নের হঠাৎ করেই সন্ধান পাওয়া। যে উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাওয়া। ফিকে হয়ে যাওয়া লাল এখন আবার কেমন যেনো জেগে উঠতে চাইছে হঠাৎ করেই। যে শরিকদল ফরোয়ার্ড ব্লক দলকে ভোটের সময় আসন দিতে গিয়ে হিসেব করতেন আলিমুদ্দিন এর কর্তারা। সেই দূরে ঠেলে দেওয়া বাম শরিক ফরোয়ার্ড ব্লক এর নেতাদের এখন কাছে টেনে নিয়ে এই দেউচা পাঁচামিতে নতুন করে বাঁচার জন্য স্বপ্ন দেখা শুরু করতে হচ্ছে বামদের। সত্যিই রাজনীতিতে কত কিছুই না ঘটে। আর তাই নতুন করে কি করে এই উন্নয়ন কে বাধা দেওয়া যায় তার চেষ্টা শুরু হয়েছে।
শুধুই কি লাল পার্টি, গেরুয়া বাহিনীর লোকরাও তো এই উন্নয়ন আটকাতে কম চেষ্টা করছেন না তাঁরা। নিজেদের জমিকে শক্ত করতে। সারা দেশে উন্নয়নের জোয়ার আসুক, কিন্তু এই নিজেদের ক্ষমতা দখল না করা রাজ্যে যেনো কিছুতেই উন্নয়ন না হয়। সেদিকে নজর রেখেই তাদের সুনিপুণ ভাবনা চিন্তা আর নানা আন্দোলন। পড়শী রাজ্য ঝাড়খন্ড থেকে নিজের দলের লোক এনে হোক বা নিজের জেলার সিউড়ির লোকদের নিয়ে গিয়ে আন্দোলন করেই হোক। যে করেই হোক এই তিন বারের মা মাটি মানুষের তৃণমূল সরকারকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলে দিতে পারলেই হলো। তাহলেই তো কেল্লা ফতে দিল্লীতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে প্রশংসা আর পদ জুটবে এটা নিশ্চিত এই রাজ্যের গেরুয়া নেতাদের। সব মিলিয়ে বেশ ভালই ব্যাপার কিন্তু এই আন্দোলন আন্দোলন খেলা। আর খেলার মাঝে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেওয়া।
যে উন্নয়ন নিয়ে এত দড়ি টানাটানি। সেই উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে বলা বীরভূমের বিখ্যাত দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল দেউচা পাঁচামি কয়লা খনি প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে গতকাল মহম্মদবাজার ব্লক অফিসে জেলা প্রশাসন ও আদিবাসী প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন। গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে সবার সহযোগিতায় সমস্যার সমাধানের পথে এগিয়ে চলেছি আমরা দ্রুত। অবশেষে বৈঠকের পর আজ থেকে ফের কাজ শুরু হবারও ইঙ্গিত মিলেছে এই দেউচা পাঁচামির কয়লাখনি প্রকল্পে। আর উন্নয়নের স্বার্থে সকলের পাশে থাকার আহ্বান জানাই এই কথা বলে উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করা নানা অশুভ শক্তিকে একহাত নিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। আর তাতে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে রাজ্যের উন্নয়নের কান্ডারী মা মাটি মানুষের জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর তাই বোধহয় তিনি তাঁর আজ্ঞাবহ ভালোবাসার কেষ্ট মন্ডলের ঘাড়েই এই কাজের গুরু দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন। কারণ তিনি জানেন একমাত্র তাঁর কেষ্ট মন্ডলই পারবেন তাঁর স্বপ্নের এই প্রকল্পের উন্নয়নের এই কাজকে দ্রুত বাস্তবায়িত করতে।