ওরা কমিউনিটি যুব প্রতিবেদক, ইউনিসেফের উদ্যোগে তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে সামাজিক পরিবর্তন গড়ে তোলার অংশীদার ওরা। জী আলজিয়া আখতার, নওসিন বিশ্বাস, সোনালি দে ও রোজা খাতুন—এই চারজন ১৭ বছর বয়সী মেয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার হরিহরপাড়া ব্লকের পথারঘাটা গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ায়।বাল্যবিবাহের প্রকোপ ও তা নিয়ে সমাজের ভাবনা কী হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করে। তারা শুধু সংবাদকর্মীই নয়, বরং সমাজকর্মীও।তারা তাদের গ্রামে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।
পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় তরুণদের কাছ থেকেই উঠে আসে নতুন ধারণা।তাদের নানা স্বপ্ন এবং দৃষ্টিভঙ্গি থাকে যা গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য। পশ্চিমবঙ্গে, তরুণদের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করতেই চালু হয়েছে কমিউনিটি ইয়ুথ রিপোর্টার প্রোগ্রাম। ইউনিসেফ, ইম্যাজিন কমিউনিটি মিডিয়া এবং কলকাতা প্রেস ক্লাবের সহযোগিতায় পরিচালিত এই কর্মসূচি তরুণদের শক্তি জোগাচ্ছে এবং সামাজিক সমস্যার উপর তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ দিচ্ছে। ইউনিসেফ জানাচ্ছে এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে, তরুণ প্রতিবেদকেরা তাদের অঞ্চলের বা গ্রামের চোখ ও কান হয়ে ওঠে।সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে তারা জীবনের সৌন্দর্য ও লড়াই দুটোই তুলে ধরছে সকলের সামনে।
এমন একটা উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে খুব খুশি চার কিশোরী। যেমন রিমঝিম মণ্ডলের মতে, “কমিউনিটি ইয়ুথ রিপোর্টার হওয়ার আগে, আমি মনে করতাম যে আমাদের কথা কেউ শোনে না।কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, আমাদের কণ্ঠস্বর সমাজে পরিবর্তন আনতে পারে।”
আসলে এই প্রতিবেদকেরা শুধুমাত্র সংবাদ সংগ্রহকারী নয়, বরং তারা নিজেদের ও তাদের কমিউনিটির বাস্তব সমস্যাগুলোও তুলে ধরছেন। তারা বাল্যবিবাহ, পরিবেশ দূষণ, এবং শিক্ষা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের মতো বিষয়গুলোর উপর জোর দিচ্ছে,শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাচ্ছে।
কিশোরী কমিউনিটি রিপোর্টার সৌমিকি চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “আমাদের কণ্ঠস্বর গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমাদেরকেই ভবিষ্যতে এই সিদ্ধান্তগুলোর ফল ভোগ করতে হবে। আমরা কেবল নিজেদের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কথা বলছি।”
পশ্চিমবঙ্গের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষাগত উৎকর্ষতা থাকলেও বাল্যবিবাহের মতো সমস্যার সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে তাকেও। এখানে অনেক মেয়ের ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যায়, যার ফলে তারা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য থেকে বঞ্চিত হয়।এই প্রেক্ষাপটে, কমিউনিটি ইয়ুথ রিপোর্টার প্রোগ্রাম আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটি তরুণদের তথ্য পাওয়ার অধিকার দেয়, যা শক্তিশালী অস্ত্রের চেয়েও কার্যকরী। তারা নিজেদের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে সমাজের বহু পুরনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছে।
কমিউনিটি রিপোর্টারের কাজে নেমে কিশোরী জী আলজিয়া আখতারের উপলব্ধি, “বাল্যবিবাহ শুধুমাত্র একটি পরিসংখ্যান নয়। এটি আমাদের মতো মেয়েদের জীবন বদলে দেয়”।এই প্রতিবেদকেরা শুধু ঘটনা লিখে বা ছবি তোলার জন্য কাজ করছে না—তারা মানুষের মন ছুঁয়ে যাচ্ছে। তারা বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, পরিবেশগত সমস্যা তুলে ধরছে, এবং শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাচ্ছে।এই প্রোগ্রাম তরুণদের স্বপ্ন দেখার সাহস দিচ্ছে।
যেমন সৌমিকি চক্রবর্তী জানিয়েছে,”আমি যখন এই প্রোগ্রামে যোগ দিই, তখন মনে করতাম এটা শুধু আমার কমিউনিটির জন্য কাজ করার সুযোগ।কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, এটি আমার ভবিষ্যৎ পেশাও হতে পারে। আমি সাংবাদিক হতে চাই, যাতে নিপীড়িতদের কণ্ঠ তুলে ধরতে পারি।”
কাজেই ইউনিসেফের এই পোগ্রামে এই কিশোরী কমিউনিটি রিপোর্টারেরা শুধু সংবাদ লিখছে না তারা ভবিষ্যৎও রচনা করছে।এই গ্রামবাংলায় তারা শুধু গল্প বলছে না, বরং নিজেদের ভাগ্যও নতুনভাবে লিখছে।
Leave a comment
Leave a comment