সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
ঘরের বাইরে রটনা যাই থাক, বিরোধী তথা নিন্দুকেরা যতই “ভাঙনের গল্প” শোনাক ঘরের অন্দরে অভিষেক যে আছেন অভিষেকেই তা ফের বুঝিয়ে দিল তৃণমূল। আগামী ১৫ মার্চ দলের জেলা সভাপতি এবং চেয়ারম্যানদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটার তালিকা যাচাইয়ের কাজে জেলায় জেলায় তৈরি কোর কমিটি স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর এ বার অভিষেকের বৈঠকের দিনও বদলে গেল। ১৫ মার্চ, শনিবারের পরিবর্তে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক জেলা ও চেয়ারম্যানদের নিয়ে ১৬ মার্চ, অর্থাৎ রবিবার ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে ভোটার তালিকা নিয়ে জেলায় জেলায় পরবর্তী কর্মসূচির কি হবে এবং তার পাশাপাশি সাংগঠনিক একাধিক বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলে জানা যাচ্ছে।
রাজ্যের ভোটার তালিকায় ভিন রাজ্যের ভোটারদের নাম ঢুকিয়ে বাংলার ভোটারদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় তৃণমূলকে হারাতে এই বিশেষ চক্রান্ত করছে বিজেপি এই অভিযোগ তুলে নেতাজি ইন্ডোরের মেগা কর্মী সমাবেশ থেকে দলীয় কর্মীদের পথে নামার বার্তা দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটার তালিকার আবর্জনা দূর করতে রাজ্য স্তরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে রেখেই রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে একটি কোর কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। মমতার নির্দেশ মেনেই কোন পথে জেলায় জেলায় এই কর্মসূচি পালিত হবে তা স্থির করতে গত বৃহস্পতিবার জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব। বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, সাংগঠনিক জেলাভিত্তিক কমিটি করে দ্রুত ভোটার তালিকার গরমিলের খোঁজে নামা হবে।
দুপুরের বৈঠকে গৃহীত সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়ে যায় রাতেই। উল্লেখ্য, ভোটার তালিকা যাচাইয়ের কাজে মমতার গঠিত রাজ্য স্তরের কমিটির সদস্য হলেও বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ছিলেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি কমিটি গঠনের এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে ‘অবহিত’ ছিলেন না তৃণমূলনেত্রীও বলে তৃণমূল সুত্রে খবর। জন গেছে, নেত্রীর নির্দেশেই আপাতত তা স্থগিত রাখতে বলেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই রাজ্য সভাপতি নেতৃত্বে হওয়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়ে যাওয়া এবং আলাদা করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ফের বৈঠকের অবতারণা নিয়ে জলঘোলা হয়েছে তৃণমূলেরই অন্দরে ।
একইভাবে হঠাৎ করে অভিষেকের বৈঠকের দিন পরিবর্তনেও স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়েছে। দলের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে এর কারণ জানা যায়নি। তবে রাজনৈতিক সূত্রে খবর, ১৫ মার্চ হোলি থাকায় পরের দিন রবিবার অভিষেক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অন্যদিকে, অভিষেকের ডাকা বৈঠকের সূচি ঘোষণার ‘পদ্ধতি’ নিয়েও বিস্তর আলোচনা দলের অন্দরে। বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনের বৈঠকের পরেই জানা গিয়েছিল, অভিষেক ১৫ মার্চ বিকেল ৪টেয় জেলার নেতাদের সঙ্গে ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠক করবেন। কিন্তু দলীয় সূত্রে খবর, অভিষেকের বৈঠকের কথা দলের নেতারা জানতে পেরেছেন অনেক পরে। কেউবা জানতে পেরেছেন
সংবাদমাধ্যমের প্রচারিত সংবাদে। পদ্ধতি বা প্রচার নিয়ে প্রশ্ন যাই থাক, রাজ্য সভাপতি নেতৃত্বে হওয়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যাওয়া এবং নতুন করে অভিষেকের বৈঠকের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া এই দুয়ের মধ্যে দলে অভিষেকের রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা সেটা জলের মতো স্পষ্ট করে দিয়েছে বলেও মোট রাজনৈতিক মহলের। বস্তুত বিরোধী দলগুলো মমতা-অভিষেকের সম্পর্ক নিয়ে যতই চেঁচামেচি করুক, তৃণমূলের অন্দরে আমরা-ওরা, নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব যতই প্রকট হোক না কেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক গুরুত্ব বা সাংগঠনিক দায়িত্বে যে কোন অংশেই ভাটা পরবেনা তা ফের আরো একবার বুঝিয়ে দিল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূলের সাধারণ রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী তথা অভিষেক অনুরাগীরা একথা বলতেই পারেন ” যা খুশি ওরা বলে বলুক, ওদের কথায় কি আসে যায়?”