সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
জলের অপচয় বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর রাজ্য সরকার। সেকারণেই কলকাতা সহ গোটা রাজ্যে পাড়ায় পাড়ায় পানীয় জলের স্ট্যান্ড পোস্ট ( প্রচলিত ভাষায় স্থানীয়রা যাকে টাইম কল বলেন) যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হলে বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি রাজ্যের পুরো ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের। মূলত রাজ্য সরকারের নীতি অনুযায়ী এই স্ট্যান্ড পোস্ট যতটা সম্ভব কম বসানোর কথা। কারণ বর্তমানে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে রাজ্য সরকার। তবুও বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা ভাড়াটে সমস্যা বা শরিকি দ্বন্দ্বের খাতিরে সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য এই স্ট্যান্ড পোস্ট পাড়ায় পাড়ায় বসানো রয়েছে। কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে দেখা যায় এই স্ট্যান্ট পোস্টের মাথায় যে ট্যাপ বা কল লাগানো থাকে সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়। একবার নয় একাধিক বার সেগুলো মেরামতি করেও কোন সুরাহা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী। বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে আজ বিজেপি বিধায়ক শংকর ঘোষের প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, একাংশের মানুষের জল অপচয়ের অভ্যাসের কারণে অনেক মানুষ বিশুদ্ধ জল পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটা বন্ধ করা প্রয়োজন। সেই কারণে পুরসভা গুলিকে জলের অব্যবহৃত স্ট্যান্ড পোস্ট তুলে দিতে বলা হয়েছে। পুরমন্ত্রী জানান, রাজ্যে বর্তমানে ৭৩ হাজারের কাছাকাছি স্ট্যান্ড পোস্ট রয়েছে। আসন্ন গ্রীষ্মের মরশুমে জলের বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে সেগুলিতে কল বা ট্যাপ লাগানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের পুর এলাকায় ৭০ হাজারের বেশি স্ট্যান্ড পোস্টে কল লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কলকাতার ক্ষেত্রে সংখ্যাটা প্রায় ৭০ হাজার। কলকাতায় প্রায় সাড়ে ৬৪ লক্ষ বাড়িতে এখনো পর্যন্ত জল পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র তথা মন্ত্রী । চলতি মার্চের মধ্যে আরও ১১ লক্ষ ৮২ হাজার বাড়িতে জল দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি । মানুষের কাছে জল পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ সত্ত্বেও কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে একাংশের মানুষ বারবার ওই সব কল ভেঙে দিচ্ছে। এর ফলে জল অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেরিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু স্ট্যান্ড পোস্ট এর মাথায় ট্যাপ লাগালে জলের গতি কিছুটা কমে যায়। সে কারণেই বারবার স্ট্যান্ড পোস্টের মাথায় ট্যাব বা কল গুলোকে ভেঙে দিচ্ছেন স্থানীয় মানুষজন। মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়রের সাফ কথা
“মানুষের প্রয়োজনে যেটা লাগানো হচ্ছে সেটা মানুষ যদি রক্ষা না করে অপচয় করে তাহলে আমরা সেটা বন্ধ করে দেব। দুবার বা তিনবার কল লাগাবো। যদি তার পরেও ভাঙ্গা হয় তাহলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।” মন্ত্রীর যুক্তি, যেখানে জলের বাল্ক ব্যবহার নেই অর্থাৎ সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছানোর ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার কোনো ট্যাক্স নেয় না। ২০১১ সালে সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বিনা পয়সায় মানুষকে জল দেওয়ার নীতি ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ এখন জল সরবরাহ বাধা উৎপাদন খরচ যথেষ্ট বেড়েছে। একদিকে যেমন দাম বেড়েছে ফটকিরির তেমনি বেড়েছে বিদ্যুৎ খরচ ও শ্রমিকের খরচও। সব মিলিয়ে জল সরবরাহের উৎপাদন খরচ তা তিনগুণ বেড়েছে বলে দাবি ফিরহাদ হাকিমের। স্বাভাবিকভাবেই জলের অপচয় যদি বন্ধ করা না হয় তাহলে সরকার কড়া পদক্ষেপ নেবে এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র।