পাকিস্তানের বালুচিস্তানে ফের তীব্র অস্থিরতা! স্বাধীনতার দাবিতে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে যাওয়া বালুচ লিবারেশন আর্মি (BLA) এবার হামলা চালিয়েছে রেল পরিষেবায়, যা গোটা অঞ্চলে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
বিদ্রোহীদের দখলে চলে গেছে যাত্রীবোঝাই একটি ট্রেন, যার ফলে গোটা পাকিস্তানে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, কোয়েটা থেকে পেশোয়ারের পথে থাকা ‘জাফর এক্সপ্রেস’ মঙ্গলবার আচমকা বিদ্রোহীদের আক্রমণের শিকার হয় এবং তারা ট্রেনটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
পাকিস্তানের রেলওয়ে বিভাগের এক কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অপহৃত ট্রেনটিতে প্রায় ৫০০ জন যাত্রী ভ্রমণ করছিলেন, যাদের মধ্যে ১০০ জনের বেশি সশস্ত্র বিদ্রোহীদের হাতে আটক হয়েছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ট্রেনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ছয়জন সেনা সদস্য বিদ্রোহীদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।
বালুচ লিবারেশন আর্মি (BLA) জানিয়েছে, ট্রেনটি সম্পূর্ণ তাদের দখলে রয়েছে, এবং ভেতরে থাকা যাত্রীদের তারা বন্দি করে রেখেছে। বালুচিস্তান প্রশাসনের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দের মতে, বিদ্রোহীরা ট্রেনটিকে পেহরো কুনরি ও গাদালারের মাঝামাঝি পথের একটি নির্জন স্থানে থামিয়ে জোরপূর্বক নিয়ন্ত্রণে নেয়।
সশস্ত্র হামলার পর বিদ্রোহীরা সম্পূর্ণভাবে ট্রেনটির দখল নেয়। পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ট্রেনটিকে একটি দুর্গম পাহাড়ি টানেলের ভেতরে আটকে রাখা হয়েছে, যার ফলে নিরাপত্তা বাহিনী উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে এবং গোটা এলাকায় কড়া নজরদারি চলছে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, যাত্রীদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে পাকিস্তান সেনা খুব দ্রুত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে পারে, বিশেষ করে ট্রেনটিতে কয়েকজন সেনা সদস্য থাকার কারণে সেনাবাহিনীর তৎপরতা আরও বাড়তে পারে। তবে বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, যদি সেনা কোনো রকম শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করে, তাহলে পণবন্দি যাত্রীদের ওপর তার ভয়ংকর প্রভাব পড়তে পারে।
প্রসঙ্গত, বালুচিস্তান পাকিস্তানের বৃহত্তম ও অন্যতম খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চল হলেও স্বাধীনতার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে সংঘর্ষ চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে তাদের সম্পদ শোষণ করছে, যার বিরুদ্ধে স্বাধীনতাপন্থী গোষ্ঠীগুলো সশস্ত্র প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ‘চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর’ (CPEC) প্রকল্পের আড়ালে ইসলামাবাদ ও বেজিং মিলিতভাবে বালুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ করছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই লুটতরাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলো, যার মধ্যে অন্যতম বালুচ লিবারেশন আর্মি (BLA)।
অন্যদিকে, বিদ্রোহ দমনের নামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও ফ্রন্টিয়ার কোর বাহিনীর বিরুদ্ধে লাগাতার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ১৯৪৮ সালের ২৭ মার্চ বালুচিস্তান পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর থেকেই সেখানকার মানুষ নিজেদের স্বাধীনতা হারানোর বেদনা বহন করে চলেছে। তাদের কাছে এই দিনটি এখনো দখলের প্রতীক হিসেবে রয়ে গেছে।
বছরের পর বছর স্বাধীনতার লড়াই চালিয়ে যেতে গিয়ে বহু বালুচ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন বা রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহলে তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরতে, কিছু বছর আগে একদল বালুচ নেতা দিল্লিতে এসে ভারত সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন, যাতে পাকিস্তানের দমননীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় BLA কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে— যদি পাকিস্তান সেনা ট্রেন উদ্ধারের জন্য কোনো সামরিক অভিযান চালায়, তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, এই সংকট মোকাবিলায় ইসলামাবাদ কী কৌশল গ্রহণ করবে?
Leave a comment
Leave a comment