সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
একদিকে সনাতনী হিন্দু আর অন্যদিকে ধর্মপ্রাণ মুসলিম। এই দুপক্ষের আবেগের রাজনৈতিক লড়াই এবার বিধানসভার অন্দর থেকে ছড়ালো রাজ্য রাজনীতির প্রকাশ্য দরবারে। গতকাল রাজ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হুশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছিলেন যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে বিধানসভা থেকে মুসলমান বিধায়কদের চ্যাংদোলা করে বাইরে বার করবেন। তাদের রাস্তায় আছাড় মারা হবে। শুভেন্দুরের বক্তব্যে প্রেক্ষিতে এবার ৭২ ঘন্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে পাল্টা হুঁশিয়ারি মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবিরের। ” হিম্মত থাকলে শুভেন্দু যা বলেছেন তা করে দেখান। ৭২ ঘণ্টার সময় দিলাম। তারপর শুভেন্দু অধিকারীকে বুঝিয়ে দেব মুসলমান কাদের বলে।” হুমায়ূনের বক্তব্য, রাজ্যের বিরোধী দলনেতার পদটি একটি সম্মানীয় পদ। কিন্তু সেই সম্মান রক্ষা করতে জানেন না শুভেন্দ। যে রাজ্যে এই সাম্প্রদায়িক ভাগাভাগি রাজনীতি চলে না সেই রাজ্যের বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বিরোধী দলনেতা যে কথা বলছেন সেটা অন্যায় এবং অন্যায্য। পাল্টা হুমায়ুনের হুঁশিয়ারি ” শুভেন্দু যদি আছাড় মারতে আসেন তাহলে আমরাও বুঝিয়ে দেব ঠুসোর গুঁতো কেমন।” উল্লেখযোগ্য বর্তমানে রাজ্য বিধানসভায় তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যা ২২৬, যার মধ্যে ৪২ জন মুসলিম সম্প্রদায়ের বিধায়ক রয়েছেন। অন্যদিকে আইএসএফের একমাত্র জনপ্রতিনিধি রয়েছে নওশাদ সিদ্দিকী। শুভেন্দু অধিকারী কে পাল্টা দিতে গিয়ে ইসলামের সৃষ্টির ইতিহাস উল্লেখ করে হুমায়ুন কবীর জানিয়ে দেন। বিজেপির বর্তমান ৬৬ বিধায়কের মোকাবিলার জন্য ৪২ জন মুসলিম সম্প্রদায়ের বিধায়কই যথেষ্ট।
বলে রাখা প্রয়োজন, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় যখন শুভেন্দু অধিকারী মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন তখন থেকেই শুভেন্দু-হুমায়ুন দ্বৈরথ সামনে আসে। এবার রেজিনগরে দলীয় সভায় শুভেন্দু অধিকারীকে বক্তৃতা রাখতে দেননি হুমায়ুন কবীর। হুমায়ূনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে শুভেন্দু তখনই মুর্শিদাবাদ ছেড়ে কৃষ্ণনগর সার্কিট হাউসে চলে যান। জানা যায় শুভেন্দুর পরামর্শেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৬ সালে হুমায়ুন কোভিদ কে বিধানসভা নির্বাচনের টিকিট দেননি। সে কথার প্রেক্ষিতে হুমায়ুন কবীর আজ জানিয়ে দেন, ” সেদিন দিদি শুভেন্দুর পরামর্শে আমাকে টিকিট না দেওয়ায় মুর্শিদাবাদের দলকে মাসুল গুনতে হয়েছিল। ২০১৬ এর নির্বাচনে মুর্শিদাবাদে বাইশটি আসনের মধ্যে মাত্র চারটি আসনে যেতে তৃণমূল। ২০২১ সালে যখন ফের আমাকে প্রার্থী করা হয় সেবার ২২ টির মধ্যে কুড়ি আসনে জয় পায় তৃণমূল।” অর্থাৎ নিজের রাজনৈতিক শক্তি ও ক্ষমতা বোঝাতে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে হুমায়ুন কবিরের স্পষ্ট হুশিয়ারি ” শুভেন্দু অধিকারীর কত বড় ক্ষমতা তা আমরা জানি। উনি বার বার হিন্দু হিন্দু করতে গিয়ে যেভাবে মুসলমানদের অপমান করছেন এবং মুসলিম বিধায়কদের হুমকি দিচ্ছেন আমি হুমায়ুন কোভিদ আপনাকে 72 ঘন্টার সময়সীমা দিচ্ছি এবং চ্যালেঞ্জ করছি। যদি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আপনি আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে বিধানসভায় আপনার ঘরের বাইরে আমরা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিধায়ক আপনাকে বুঝে নেব। আপনি আপনার ৬৬ জন বিধায়ককে নিয়ে কি করেন তা দেখা যাবে।”