দুর্নীতি মামলার অন্তর্ভুক্ত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিন শুনানির সময় সিবিআই আদালতে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, শান্তনু বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা দিয়েছিলেন, যা দুর্নীতির জাল আরও প্রসারিত করছে।
সিবিআই-এর তদন্তে উঠে এসেছে, শান্তনু শুধু সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগীই ছিলেন না, বরং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক মহলেও তাঁর যথেষ্ট প্রভাব ছিল। এই প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে তদন্তকারী সংস্থা।
অভিযোগ অনুযায়ী, চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করে শান্তনু তাদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন। রাজনৈতিক যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে নির্দিষ্ট পদে নিয়োগের জন্য লেনদেন চালাতেন তিনি। তদন্তে জানা গেছে, তাঁর অধীনে একটি চক্র সক্রিয় ছিল, যেখানে একাধিক দালাল ও সাব-দালাল চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলত এবং সেই অর্থের বড় অংশই শেষ পর্যন্ত সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের হাতে পৌঁছত।
সিবিআই আদালতে দাবি করেছে, এই অর্থ আরও উপর মহল পর্যন্ত পৌঁছত, যা নিয়োগ দুর্নীতির শেকড় কত গভীর তা স্পষ্ট করে। শান্তনুর রাজনৈতিক যোগাযোগ এবং সুজয়ের সঙ্গে তাঁর আর্থিক লেনদেনের বিশদ তথ্য হাতে আসায় তদন্ত আরও জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থা। এই মামলায় প্রকাশ্যে আসা নতুন তথ্যের পর এর ভবিষ্যৎ কোন দিকে মোড় নেবে, সেটাই এখন নজরে রয়েছে।
তদন্তকারী সংস্থার দাবি, এই দুর্নীতির চক্রে শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত নয়, বরং প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তারও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
সিবিআই আদালতে সতর্ক করে জানিয়েছে, যদি শান্তনুকে জামিন দেওয়া হয়, তাহলে তিনি সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন, যা তদন্তের স্বচ্ছতা নষ্ট করবে এবং প্রমাণ সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবে। তদন্তে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, নিয়োগ দুর্নীতির মূল পরিকল্পনার সঙ্গে শান্তনুর সংশ্লিষ্টতা আরও স্পষ্ট হয়েছে। আগের চার্জশিটেও তাঁর নাম ছিল, যা এই কেলেঙ্কারির গভীরতা আরও প্রকট করেছে।
এছাড়া, অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের বাসভবনে একাধিকবার গোপনে সাক্ষাৎ করেছিলেন শান্তনু ও কুন্তল ঘোষ। তাদের এই গোপন বৈঠক পুরো দুর্নীতির নতুন দিক উন্মোচন করছে এবং তদন্তকারীদের কাছে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
সূত্রের দাবি, ওই বৈঠকের সময় কুন্তল ঘোষের নির্দেশে পুরো কথোপকথন রেকর্ড করা হয়, যা পরে সিবিআই-এর হাতে আসে। চার্জশিটে বলা হয়েছে, একটি রেকর্ডিংয়ে শোনা যায়, যেখানে সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র অভিযোগ করছেন যে, নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির ক্ষেত্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৫ কোটি টাকা চেয়েছিলেন। তবে ওই পরিমাণ অর্থ জোগাড় করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি বলেও সেখানে উল্লেখ রয়েছে। তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে, কুন্তল ঘোষ ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় যৌথভাবে প্রায় ২,০০০ চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহের ছক কষেছিলেন।
এই সংক্রান্ত সমস্ত নথি আদালতে জমা দিয়ে সিবিআই দাবি করেছে, যদি শান্তনুকে জামিন দেওয়া হয়, তবে তদন্তে বড় বাধা সৃষ্টি হতে পারে। এতে পুরো দুর্নীতির জাল উন্মোচন করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। এখন আদালত কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা নিয়ে সকলের দৃষ্টি সেদিকেই।
Leave a comment
Leave a comment