প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা শান্তিনিকেতন, যেখানে বসন্ত মানেই রঙিন উৎসব, কিন্তু এবছরের দোলের উৎসবের ফলে যা ঘটতে চলেছে, তা পরিবেশের জন্য একটি বিপর্যয়! সোনাঝুড়ির জঙ্গল, যা শান্তিনিকেতনের অন্যতম সুন্দর এবং সংরক্ষিত এলাকা, তা এবার বিপদের মুখে। বন দফতর তার নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ঘোষণা করেছে, সোনাঝুড়ির জঙ্গলে দোল খেলা এবার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ? প্রতি বছর দোলের দিনে সোনাঝুড়ির মাটি রঙিন আবিরে ভরে যায়, আর এই আবির এবং উচ্ছৃঙ্খল পর্যটকদের পদচারণায় পুরো পরিবেশে যে ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়ে, তা আর সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না।
সোনাঝুড়ির জঙ্গলে রঙ খেলার সময় মাটিতে যে আবির পড়ে, তা শুধু দৃষ্টিনন্দন নয়, পরিবেশের জন্য এক ভয়াবহ বিপদ। এই আবির সোনাঝুড়ির মাটির গঠন ও গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য ভেঙে পড়ে। রঙিন আবিরের জন্য মাটির অণুপ্রাণ জ্ঞানগতভাবে বদলে যায়, এবং এটি সোনাঝুড়ির নরম মাটি ও গাছের জন্য এক ভয়ংকর আঘাত। সোনাঝুড়ির রঙিন মাটি এখন শুধুই একটি স্মৃতি, আর সেটি পরিবেশের জন্য এক অনির্দিষ্ট ক্ষতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সোনাঝুড়ির জঙ্গলে এত মানুষের প্রবাহ এবং প্রচুর গাড়ি আসার ফলে গাছগুলোর স্বাস্থ্যের ওপর বিপর্যয় এসেছে। প্রতিবার দোলের দিন সোনাঝুড়িতে হাজার হাজার মানুষ আসে, যারা আবির দিয়ে খেলা করে এবং নিজেদের গাড়ি জঙ্গলের মাঝে পার্ক করে। এতে গাছের শাখা-প্রশাখা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মাটি চুরমার হয়ে যায়। রঙ খেলার কারণে গাছের পাতা এবং শাখায় আবির আটকে যায়, যা গাছের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।
এই জঙ্গলের সৌন্দর্য এবং স্বচ্ছতা ছিল বাঙালির কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। শান্তিনিকেতনের পরিবেশ এমনই ছিল, যেখানে প্রকৃতির সাথে মিশে দোলের আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু এখন, এই আনন্দের দিনগুলোই পরিবেশের ওপর ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন দফতরের নিষেধাজ্ঞায় শান্তিনিকেতনের সোনাঝুড়ির প্রকৃতির প্রতি এক বড় ধাক্কা লাগল।
এদিকে, এ সিদ্ধান্তে হতাশ হয়ে পড়েছেন অনেক পর্যটক। বছরের পর বছর ধরে যারা সোনাঝুড়ির জঙ্গলে দোল খেলার পরিকল্পনা করছিলেন, তাদের কাছে এটি একটি বড় আঘাত। সোনাঝুড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে যারা শান্তিনিকেতনে আসতেন, তারা এবার ফিরে যাচ্ছেন হতাশ হয়ে। কারণ, বন দফতরের এই নিষেধাজ্ঞায় দোলের রঙের খেলা আর সম্ভব হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্ত উৎসবে যেখানে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সেখানে এবার বন দফতরের এই নিষেধাজ্ঞা একটি নতুন রকমের পরিবেশগত জটিলতা সৃষ্টি করেছে। সোনাঝুড়ি, যা একসময় শান্তিনিকেতনের অন্যতম দর্শনীয় স্থান ছিল, এবার পরিবেশ রক্ষার্থে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল।
এই পরিবেশ বিপর্যয়ের দায় শুধু পর্যটকদের নয়, আমাদের সকলের। শান্তিনিকেতন, সোনাঝুড়ি, এবং অন্যসব প্রাকৃতিক স্থান সুরক্ষিত রাখতে আমাদের সচেতনতা এবং দায়িত্ববোধই প্রয়োজন।