মহাশূন্যে ভেসে থাকা। নিকষ কালো অন্ধকার না আলোর জগৎ আমার ঠিক জানা নেই সেখানে ভেসে থাকা। বেঁচে থাকা। উড়ে বেড়ানো। ঘুরে বেড়ানো। কেমন যেনো একটা নতুন অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরিয়ে নেওয়া। প্রতি মুহূর্তে, প্রতি ঘণ্টায়, প্রতি দিনে, প্রতি পলে আর অনুপলে। সেই নয়ে নবগ্রহের সৌরজগতের মাঝে, মহাশূন্যের মাঝে, নীল আকাশ এর মাঝে। সেই নতুন অচেনা জগতের মাঝে ভেসে ভেসে অপেক্ষা করা। ঘরে ফেরার পথের অপেক্ষা। যে অপেক্ষার আর শেষ হয় না কিছুতেই।
ঘরে ফেরার সময় হয়না কিছুতেই আর সুনীতা এবং বুচ উইলমোরের। প্রায় ১০ মাস ধরে মহাকাশে কাটানোর পর এরা দুজনেই এবার পৃথিবীতে পা দেবেন। ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে এই দুজনে মহাকাশের বাসিন্দা হয়ে রয়ে গিয়েছেন। এবার নাকি তাদের ঘরে ফেরার পালা। আসলে যে ঘরে ফেরা নিয়ে কত বাধা আর বিপত্তি। যে ঘরে ফেরা নিয়ে কত কিছুই না ঘটছে চারিদিকে। আর সেই মহাশূন্যে ভেসে থাকা সুনীতা আর উইলমোর কেমন দিব্যি দিন কাটিয়ে যাচ্ছেন সেই অজানা অচেনা গ্রহের সংসারে। সেই অচেনা জগতের সংসারে। যদিও এই দশমাসে এই অচেনা অজানা জগতে আর তত ভয় করে না তাদের। দিব্যি কেমন এডজাস্ট হয়ে গেছে যেনো সবকিছুই। আর তাই তারা জানেন না কবে ফিরবে তারা এই মহাশূন্য ছেড়ে এই ধূলি ধূসর পৃথিবীতে।
তবে পৃথিবীতে ফেরার পর সুনীতাদের কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হবে এখানকার মাটিতে পা দিয়ে হেঁটে চলার কাজটি। নাসার প্রাক্তন মহাকাশ বিজ্ঞানী লেরস চিয়াও জানিয়েছেন মহাকাশ থেকে সুনীতারা যখন পৃথিবীর মাটিতে পা দেবেন তখন তাদের পায়ের প্রতিটি পদক্ষেপ হবে একেবার নতুন জন্ম নেওয়া একটি ছোট্ট শিশুর মতো। টলমল পায়ে নতুন করে আবার যেনো হাঁটতে শিখবেন তাঁরা।
কারণ পায়ের যে শক্ত চামড়ার উপর মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে বা হাটাচলা করে সেখানে এখন সুনীতাদের পায়ের পাতার চামড়া একেবারে তুলোর মতো নরম হয়ে গিয়েছে। তাই তারা পৃথিবীতে এসেই হাঁটতে পারবে না প্রথমেই। এখানেই শেষ নয়, পায়ের পাতার বহু কোষ বর্তমানে প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। সেগুলি পৃথিবীর আকর্ষণ না পেলে আবার সক্রিয় আকার ধারণ করবে না। ১২ মার্চ অর্থাৎ মহাকাশে যাত্রা করার কথা ছিল ক্রিউ নাইন এর। কিন্তু যান্ত্রিক গোলযোগে সেটা যেতে পারেনি। কথা ছিলো ১৬ মার্চ তারা দুজনেই পা দেবে পৃথিবীর মাটিতে। কিন্তু সেই দিনের পরিবর্তন হয়ে এখন শুধুই অপেক্ষা করতে হচ্ছে সুনীতাদের।
নিজের এক সাক্ষাৎকারে সুনীতা জানিয়েছেন তিনি মহাকাশের সবকিছুকেই মিস করবেন। সেখানে এই দীর্ঘসময় ধরে থাকা। এটি যেন জীবনের যেনো এক অসাধারণ সময়। চোখ খোলা থেকে শুরু করে ঘুম সবই যেন মহাকাশ তাঁদেরকে আদর করেছে। অতল অন্ধকার যেন সেখানে অন্ধকার নয়। এই অভিজ্ঞতাকে তাঁরা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মনে রাখতে চান তিনি।
এবারের নতুন বছর সুনীতারা মহাকাশে কাটিয়েছেন। পাশাপাশি স্পেসওয়াক করে তারা নতুন রেকর্ড তৈরি করেছেন। পৃথিবীর মাটিতে এসে সুনীতাদের যে খানিকটা সময় মানিয়ে নিতে লাগবে সেকথা তারা নিজেরাও জানে। নাসা সেই কাজকেই দ্রুত করার দিকে মন দিয়েছে। এবার বাকি কাজটা শেষ হলেই পৃথিবীতে ফের নিজের বাড়িতে ফিরতে পারবেন সুনীতা এবং তাঁর সহযোগী বুচ। এখন গোটা বিশ্ববাসী তাকিয়ে রয়েছে সেদিকেই।