সবার জীবনে নতুন করে শুরু করার সুযোগ আসে না, তবে বরুণ চক্রবর্তীর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি ভারতীয় স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার ধাক্কা তাঁকে মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছিল। তখন মনে হয়েছিল, হয়তো ভারতের জার্সিতে খেলার স্বপ্ন চিরতরে শেষ হয়ে গেল। কিন্তু ভাগ্যের অন্য পরিকল্পনা ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে জসপ্রীত বুমরার চোটের কারণে দলে পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, আর সেই সুযোগেই আবার ভারতের স্কোয়াডে জায়গা করে নেন বরুণ।
এই প্রতিযোগিতায় মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেই নিজের দক্ষতার ছাপ রেখে যান বরুণ, পরিণত হন সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহকারীদের একজন হিসেবে।
তবে এই সফলতার পথটা সহজ ছিল না। একসময় বরুণের জীবনে নেমে এসেছিল দুঃস্বপ্নের মতো মুহূর্ত। প্রতিদিনই অজানা নম্বর থেকে আসত ভয়ভীতি দেখানো ফোনকল, যেখানে বারবার সতর্ক করে দেওয়া হতো—দেশে ফেরাটাই হবে তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় ভুল।
শুধু ফোনে পাওয়া হুমকিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না ভয়, বরং তাঁর বাড়ির আশপাশে অচেনা লোকজনের আনাগোনা পরিস্থিতিকে আরও ভীতিকর করে তুলেছিল। অনিশ্চয়তা আর আতঙ্কে কাটছিল প্রতিটি মুহূর্ত, নিজেকে একরকম গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না তাঁর কাছে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সেই দুঃসহ সময়ের কথা তুলে ধরেছেন বরুণ চক্রবর্তী।
তিনি জানান, “২০২১ সালের বিশ্বকাপে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে আমি চরম হতাশ ছিলাম, একটিও উইকেট নিতে পারিনি। এরপর জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর মনে হয়েছিল, হয়তো আর ফেরা হবে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ভাবনাই আমাকে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলেছিল, আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল।”
বরুণ আরও শেয়ার করেন, “একটা সময় ছিল যখন প্রতিদিন ভয়ের মধ্যে থাকতে হতো। নিয়মিত হুমকি ফোন আসত, যেখানে নানা রকম সতর্কবার্তা দেওয়া হতো। সব মিলিয়ে সেই সময়টা আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায় ছিল।”
অজানা নম্বর থেকে ফোন আসত, বলা হত—দেশে ফিরলেই বিপদে পড়তে হবে। ভয় আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল এয়ারপোর্ট থেকে ফেরার পথে কয়েকজন বাইক নিয়ে পেছনে ধাওয়া করা। সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল, কোনো অজানা বিপদ ঘনিয়ে আসছে। কী হতে চলেছে, তা বুঝতেই পারছিলাম না।
তবে অতীতের সেই দুঃসহ দিনগুলোকে পিছনে ফেলে বরুণ এখন সম্পূর্ণ অন্য মানুষ। কঠিন সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে তিনি আবারও জাতীয় দলে ফিরেছেন। এটি শুধুমাত্র ক্রিকেটে ফিরে আসার কাহিনি নয়, বরং লড়াই করে এগিয়ে যাওয়ার এক বিরল উদাহরণ।
আগামী আইপিএল মৌসুমে তাঁকে আবারও দেখা যাবে কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সিতে, যেখানে দল আগেই তাঁর ওপর ভরসা রেখেছে। বরুণের এই প্রত্যাবর্তন কেবল ব্যক্তিগত সাফল্যের নয়, বরং বহু তরুণ খেলোয়াড়ের জন্য প্রেরণার এক উজ্জ্বল প্রতীক হয়ে থাকবে।
Leave a comment
Leave a comment