সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে পাশে বসিয়েই দলের সংগঠনের রাশ যে তারই হাতে সেটা বুঝিয়ে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার সর্বস্তরের তৃণমূল কর্মী নেতাদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন “দলের জেলা ও ব্লক স্তরের সংগঠনে রদবদল হবে।” একই সঙ্গে অভিষেক আরো জানান, যেখানে যেখানে প্রয়োজন সেখানে নিচু তলায় অর্থাৎ বুথ স্তরেও নতুন মুখ আনা হবে। এই যাবতীয় রদবদল হবে গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে। লোকসভা নির্বাচনে ফলাফলের ভিত্তিতে এদিনের বৈঠকে একাধিক জেলার কাজকর্ম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন অভিষেক। বিশেষ করে মালদা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাজে তিনি যে একেবারেই সন্তুষ্ট নন। সে কথা প্রকাশ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। উত্তর ২৪ পরগনার একাংশের কাজ নিয়ে তার অভিযোগ না থাকলেও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কাজে তিনি যথেষ্ট খুশি । নিজে ডায়মন্ড হারবারের সংসদ ফলে দক্ষিণ 24 পরগনার সাংগঠনিক দায়িত্বে সম্পূর্ণ দায়ভার তার ঘাড়েই পরে। এবং কত লোকসভা নির্বাচনে তিনি নিজে ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্র সহ গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। জেলা ধরে ধরে সাংগঠনিক দুর্বলতা বা কাজকর্মে উদাসীনতার কথা উল্লেখ জেলা-ব্লক এমনকি ভূত স্তরে তৃণমূলের সংগঠনের রদবদলের সিদ্ধান্তের কথা রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে পাশে বসিয়েই সাধারণ কর্মীসভায় জানান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ফলে সার্বিকভাবে তৃণমূলের সাংগঠনিক রাশ কার হাতে থাকবে তা নিয়ে আদি নব্য দন্দ চর্চিত হলেও এদিনের বৈঠকে অভিষেকের “সাফ কথা” ফের বুঝিয়ে দিল ‘অভিষেক আছেন অভিষেকেই’।
প্রসঙ্গত, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের কাজে জেলায় জেলায় তৈরি কোর কমিটি স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর থেকেই তৃণমূলে অভিষেকের গুরুত্ব অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। রাজ্য সভাপতির বৈঠকের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে প্রথমে ১৫ মার্চ তারপর ১৬ মার্চ এবং ফের ১৫ মার্চ সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ভার্চুয়াল বৈঠকের কথা ঘোষণা করা হয়।
এই বৈঠকে ভোটার তালিকা নিয়ে জেলায় জেলায় পরবর্তী কর্মসূচির কি হবে এবং তার পাশাপাশি সাংগঠনিক একাধিক বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়।
ভোটার তালিকার আবর্জনা দূর করতে রাজ্য স্তরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে রেখেই রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে একটি কোর কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। মমতার নির্দেশ মেনেই কোন পথে জেলায় জেলায় এই কর্মসূচি পালিত হবে তা স্থির করতে আজকের ভার্চুয়াল বৈঠক করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে স্থির করা হয় সাংগঠনিক জেলাভিত্তিক কমিটি করে দ্রুত ভোটার তালিকার গরমিলের খোঁজে নামা হবে। রাজ্য সভাপতি বৈঠকেও একইভাবে এই ধরনের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। অথচ
দুপুরের বৈঠকে গৃহীত সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়ে যায় রাতেই। উল্লেখ্য, ভোটার তালিকা যাচাইয়ের কাজে মমতার গঠিত রাজ্য স্তরের কমিটির সদস্য হলেও বৃহস্পতিবারে সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে হওয়া বৈঠকে ছিলেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি কমিটি গঠনের এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে ‘অবহিত’ ছিলেন না তৃণমূলনেত্রীও বলে তৃণমূল সুত্রে খবর। জানা গেছে, নেত্রীর নির্দেশেই বৃহস্পতিবারের বৈঠকের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখতে বলা হয়। ইতিমধ্যেই রাজ্য সভাপতি নেতৃত্বে হওয়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়ে যাওয়া এবং আলাদা করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ফের বৈঠক এবং তার বার্তা নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে তৃণমূলেরই অন্দরে । তবে নতুন করে অভিষেকের বৈঠক এবং রদবদল ও নতুন মুখ নিয়ে আসার সিদ্ধান্তের কথা স্পষ্ট জানানো নিয়ে দলে অভিষেকের রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা সেটা জলের মতো স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বস্তুত বিরোধী দলগুলো মমতা-অভিষেকের সম্পর্ক নিয়ে যতই চেঁচামেচি করুক, তৃণমূলের অন্দরে আমরা-ওরা, নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব যতই প্রকট হোক না কেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক গুরুত্ব বা সাংগঠনিক দায়িত্বে যে কোন অংশেই ভাটা পরবেনা তা ফের আরো একবার বুঝিয়ে দিল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।