একদিন আগেই ইরাকের আল আনবার প্রদেশে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড এবং ইরাকি বাহিনীর হামলায় মৃত্যু হয়েছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের অন্যতম প্রধান ‘আবু খাদিজা’র। এবার ট্রাম্পের নির্দেশে শনিবার লোহিত সাগরের তীরে ইয়েমেনে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করল মার্কিন সেনাবাহিনী। ইরান-সমর্থিত হুথি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বৃহৎ আকারের এই হামলায় কমপক্ষে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইয়েমেনের রাজধানী সানায় এই মার্কিন হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন অসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে, অন্যদিকে হুথিদের ঘাঁটি সাদা প্রদেশে চার শিশু ও এক মহিলাসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, “বিস্ফোরণগুলি এতই ভয়াবহ ছিল যে এটি আমাদের আশপাশকে ভূমিকম্পের মতো কাঁপিয়ে দিয়েছে। আমাদের বাচ্চা ও মহিলারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।”তবে সাধারণ মানুষের মৃত্যু হলেও ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথিদের বিরুদ্ধেই মূলত আমেরিকার এই অভিযান বলে জানা গেছে। এর মাধ্যমে তিনি ইরানকেও বার্তা দিয়েছেন।
এই হামলার পরেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুথিদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে “তাদের সময় শেষ”।ট্রাম্প লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলের বিরুদ্ধে হুথিদের হুমকির কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে এরকমটা হলে তিনি “প্রচণ্ড প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করবেন যতক্ষণ না লক্ষ্য অর্জন করা যায়”। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছেন, “সমস্ত হুথি সন্ত্রাসীদের জন্য বলছি, তোমাদের সময় শেষ, এবং তোমাদের হামলা আজ থেকেই বন্ধ করতে হবে। যদি তা না কর, তাহলে আগে কখনও দেখনি এমন ধ্বংসযজ্ঞ তোমাদের উপর নেমে আসবে!” ট্রাম্প ইরানকেও সতর্ক করে বলেছেন যে তাদের অবিলম্বে এই গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
হুথিদের রাজনৈতিক ব্যুরো অবশ্য দায়িত্ব গ্রহণের পরেই ট্রাম্পের করা এই হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে বর্ণনা করেছে। তারা বলেছে যে ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী “সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং উত্তেজনার জবাবে উত্তেজনা দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে”।ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন যে মার্কিন সরকারের “ইরানের বিদেশনীতি নির্ধারণের কোনো অধিকার বা কাজ নেই”। তিনি এই হামলার পরেই এক্স (টুইটার)-এ তিনি লিখেছেন, “ইসরায়েলের গণহত্যা ও সন্ত্রাসের সমর্থন বন্ধ করুন। ইয়েমেনি জনগণের হত্যা বন্ধ করুন।”
পশ্চিম এশিয়ার প্রান্তে সৌদি আরবের দক্ষিণে ছোট্ট দেশ ইয়েমেন। একদিকে লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগর। অন্য দিকে রয়েছে আরব সাগর। এই জলপথেই যাতায়াত করা বাণিজ্যতরীর উপর হামলা চালায় ইয়েমেনের হুথিরা। উদ্দেশ্য বাণিজ্যে বাধা দেওয়া।বারবার এই হামলার মুখে পড়েছে আমেরিকার মিত্র দেশ ইজরায়েলের বাণিজ্য জাহাজ।ট্রাম্পের দাবি এই হামলা এবার থামাতে হবে।
গত এক দশকে ইয়েমেনের বেশিরভাগ অংশ দখল করা এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তার উপকূল থেকে জাহাজে একাধিক হামলা চালিয়েছে, যা বিশ্ব বাণিজ্যকে ব্যাহত করেছে। এই হামলাগুলোকে গাজায় প্যালেস্তাইনের জন্য সংহতি প্রকাশের উদ্দেশ্যে করা বলে ব্যখ্যা করেছে হুথিরা।২০২৩ সাল থেকে হুথিরা মার্কিন যুদ্ধজাহাজে ১৭৪ বার এবং বাণিজ্যিক জাহাজে ১৪৫ বার হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে।
Leave a comment
Leave a comment