যদি সমালোচনাই না থাকল তা হলে কিসের গণতন্ত্র? গণতন্ত্র মানেই তো বহুস্বর, ভিন্নমতকে গ্রহণ করার মত উদার এক ক্ষেত্র।মার্কিন মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও পডকাস্টার লেক্স ফ্রিডম্যানের সঙ্গে কথা বলার সময় গণতন্ত্র নিয়ে এমনই এক বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।সদ্য প্রকাশিত হয়েছে তাঁর এই দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, “আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে ‘সর্বদা আপনার সমালোচকদের কাছাকাছি রাখুন’। সমালোচকরা আপনার নিকটতম সঙ্গী হওয়া উচিত, কারণ সত্যিকারের সমালোচনার মাধ্যমে আপনি দ্রুত উন্নতি করতে পারেন এবং ভালোভাবে কাজ করতে পারেন।”
গণতন্ত্রের প্রাণ হিসেবে সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেছেন, ‘তীক্ষ্ণ ও সুস্পষ্ট’ সত্যিকারের সমালোচনা আজকাল খুঁজে পাওয়া কঠিন। তিনি এও উল্লেখ করেছেন যে সমালোচনা ও অভিযোগের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।কিন্তু সমালোচনাকে তিনি কীভাবে তা মোকাবেলা করেন? লেক্স ফ্রিডম্যানের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন যে তিনি এটিকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, “আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে সমালোচনা গণতন্ত্রের প্রাণ। যদি গণতন্ত্র সত্যিই আপনার শিরায়-ধমনীতে প্রবাহিত হয়, তবে আপনাকে এটিকে গ্রহণ করতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমেরিকা সফরের সময়ে এই সাক্ষাৎকারটি নেন ফ্রিডম্যান। প্রায় তিন ঘণ্টার ওই সাক্ষাৎকারটি রবিবার প্রকাশিত হয়েছে। এই সাক্ষাৎ কারে নানা বিষয়ে কথা বলেছেন নরেন্দ্র মোদী।তাঁর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর চালকের আসনে বসে থাকা মোদীর ভাবনা ও অনুভব।এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “আসলে, আমি বিশ্বাস করি আমাদের আরও সমালোচনা থাকা উচিত, এবং তা তীক্ষ্ণ ও সুস্পষ্ট হওয়া উচিত। কিন্তু আমার আসল অভিযোগ হলো, আজকাল আমরা যা দেখি তা সত্যিকারের সমালোচনা নয়।”
তাঁর মতে, “সত্যিকারের সমালোচনার জন্য গভীর অধ্যয়ন, গবেষণা ও সতর্ক বিশ্লেষণের প্রয়োজন। এতে সত্যকে মিথ্যা থেকে আলাদা করতে হয়। আজকাল মানুষ শর্টকাট খোঁজে, সঠিক গবেষণা এড়িয়ে যায়… প্রকৃত দুর্বলতা চিহ্নিত করার পরিবর্তে তারা সরাসরি অভিযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে।”
আসলে একটি শক্তিশালী গণতন্ত্রের জন্য সত্যিকারের সমালোচনা প্রয়োজন।পডকাস্টে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, “অভিযোগ কারও উপকার করে না, এগুলি শুধু অপ্রয়োজনীয় সংঘাত সৃষ্টি করে। এজন্যই আমি সর্বদা সমালোচনাকে খোলামেলাভাবে স্বাগত জানাই। এবং যখনই মিথ্যা অভিযোগ ওঠে, আমি শান্তভাবে আমার দেশের সেবায় সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে নিয়োজিত থাকি।”
সাক্ষাৎকারে ভারত-পাকিস্থান সম্পর্ক থেকে বন্ধু ট্রাম্পের কথা উঠে এসেছে অনেক কিছুই।এসেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছোটবেলার কথাও।এখানে তিনি স্মরণ করেছেন তার গুজরাটের গ্রামের কথা। পরিবারের সঙ্গে বাড়িতে যে সাধারণ জীবনযাপন করতেন তার কথা। জানিয়েছেন ছোটবেলায় তাকে চক দিয়ে ক্যানভাস জুতো সাদা করতে হতো এবং গরম জল ভরা তামার পাত্র দিয়ে কাপড় ইস্ত্রি করতে হতো।তিনি বলেন, ” আমরা কখনও মনে করিনি যে আমরা গরিব। আপনি দেখুন, যারা ভালো জুতো পরতে অভ্যস্ত, তারা যখন তা পরে না, তখন তার অভাব অনুভব করে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে, আমরা জীবনে কখনও জুতো পরিনি, তাই আমরা কী করে জানব যে জুতো পরা একটি বড় ব্যাপার? আমরা তুলনা করার অবস্থায় ছিলাম না। আমরা ঠিক এমনই জীবনযাপন করতাম।”
সাক্ষাৎকারে মোদীর বার্তা ছোটবেলা থেকেই তৈরি হয় সহনশীল মন।আর কে না জানে সবাইকে নিয়ে চলার যে গণতন্ত্র তাতে সেই বড় প্রয়োজন সেই মনের।
