প্রায় এক বছর পর জাতীয় দলে ফিরে প্রথম ম্যাচেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দিলেন সুনীল ছেত্রী। অনেকদিন পর জাতীয় দলে ফিরে গোল করে প্রমাণ করলেন, কেন তিনি ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা নাম। তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে দিল, কোচ মানোলো মার্কেজ় তাঁকে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিক পথেই ছিলেন। এই ম্যাচে শুধুমাত্র সুনীলই নয়, গোলের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন রাহুল ভেকে ও লিস্টন কোলাসোও।
আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে মলদ্বীপকে ৩-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো জয় পেলেন কোচ মানোলো।
শুরু থেকেই শিলংয়ের মাঠে খেলায় দাপট দেখায় ভারতীয় দল। দুই উইং ধরে আক্রমণের ধার বাড়িয়ে তোলেন লিস্টন কোলাসো ও মহেশ নাওরেম, বারবার প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে চাপে ফেলেন তাঁরা।
ভারত ছোট ছোট পাসে আক্রমণ সাজিয়ে খেলছিল, তবে আক্রমণের শুরুতেই গোলের সুযোগ তৈরি হলেও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় দল। সুনীল ছেত্রীর সঙ্গে আক্রমণের দায়িত্বে ছিলেন ভালপুইয়া, যিনি ম্যাচের শুরুতেই আত্মবিশ্বাসী ফুটবল খেলছিলেন এবং প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে চাপ তৈরি করছিলেন।
ফিফা ক্রমতালিকায় ভারতের (১২৬তম) তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকা মলদ্বীপ (১৬২তম) ম্যাচের শুরু থেকেই রক্ষণাত্মক কৌশলে খেলে। তবে তাদের রক্ষণদেয়াল খুব বেশি সময় ধরে ভারতীয় আক্রমণ ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি।
৩৫তম মিনিটে কর্নার থেকে ব্রেন্ডন ফের্নান্দেসের নিখুঁত ক্রস পেয়ে মাথা ছুঁইয়ে দুর্দান্ত গোল করেন রাহুল ভেকে, ভারতকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন তিনি। প্রথম গোলের পর আরও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে দল, আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। ঠিক তখনই দুর্ভাগ্যজনকভাবে চোট পান ব্রেন্ডন, ফলে বাধ্য হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। তাঁর পরিবর্তে খেলতে নামেন ফারুখ চৌধুরী, যিনি বদলি হিসেবে মাঠে নেমেই দলের আক্রমণে গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন।
প্রথমার্ধের অন্তিম মুহূর্তে গোলের দারুণ সম্ভাবনা তৈরি হলেও সেটি কাজে লাগাতে পারেননি তিনি।
ম্যাচজুড়ে মলদ্বীপের আক্রমণ ছিল নামমাত্র, যা সহজেই প্রতিহত করেন শুভাশিস বসু ও মেহতাব সিংহের রক্ষণভাগ। ভারতীয় গোলরক্ষক বিশাল কাইথকে তেমন কোনো কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধের সূচনাতেও ফারুখ নিশ্চিত সুযোগ পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন। তবে ৬৫ মিনিটে লিস্টন কোলাসো অসাধারণ এক হেডে বল জালে পাঠিয়ে ভারতের লিড দ্বিগুণ করেন, স্কোরলাইন দাঁড়ায় ২-০।তবে সমর্থকদের অপেক্ষার কারণ ছিল একটাই—সুনীল ছেত্রীর গোল দেখা।
অবশেষে ৭৬তম মিনিটে সেই প্রতীক্ষার অবসান! লিস্টনের দারুণ ক্রসে নিখুঁত হেডে বল জালে পাঠান সুনীল। গোলের পরই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি, ধীর পায়ে গ্যালারির দিকে এগিয়ে হাতজোড় করে সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁর চোখেমুখে তখন অনুভূতির ঝলক স্পষ্ট।
৮২তম মিনিটে কোচ মানোলো ছেত্রীকে বদলির সিদ্ধান্ত নিতেই গ্যালারির দর্শকরা করতালি ও উচ্ছ্বাসে তাঁকে সম্মান জানায়। ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভারত আক্রমণ অব্যাহত রাখে, গোলের আরও সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে যায়। কোচ মানোলোর পরিকল্পনা ছিল পরিষ্কার—খেলার ছন্দ ধরে রেখে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখা। এই দুর্দান্ত জয়ে দলের আত্মবিশ্বাস আরও শক্তিশালী হলো। আগামী ২৫ মার্চ এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত সুনীলরা!
Leave a comment
Leave a comment