নয়াদিল্লির ২৪, আকবর রোডের কংগ্রেস সদর দফতর থেকে ইন্দিরা ভবনে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত দলীয় কর্মীদের মধ্যে এক গভীর অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। ১৯৭৮ সাল থেকে আকবর রোডের ঐতিহ্যবাহী প্রাঙ্গণে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের অনেকেই এখন আর্থিক সংকট এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি।
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব — মল্লিকার্জুন খড়গে, রাহুল গান্ধি, প্রিয়াঙ্কা গান্ধি — সকলে যখন নতুন কার্যালয়ে পা রেখেছেন, তখন শতাধিক পূর্ণকালীন, পুনর্নিযুক্ত এবং অস্থায়ী কর্মীকে কোনো পরিষ্কার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তাঁদের কেউ কেউ ভিআরএসের (স্বেচ্ছা অবসর প্রকল্প) আশায় রয়েছেন, আবার কেউ কেউ অবৈধভাবে থাকার অনুমতির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
আকবর রোডের এই বাংলোটি মূলত এডউইন লুটেন্সের ডিজাইন করা টাইপ VIII-এর বাংলো। পার্টির চাহিদা অনুযায়ী এটি সম্প্রসারিত হয়েছে, অননুমোদিত নির্মাণেও ছাড় দেওয়া হয়েছে। আজ সেই কর্মীরা — যাঁরা ইন্দিরা গান্ধি, রাজীব গান্ধি, পিভি নরসিমহা রাও, সীতারাম কেশরী, সোনিয়া গান্ধির সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন — তাঁরা দলীয় পরিচয়ের বাইরের মানুষ হয়ে পড়েছেন।
একজন প্রবীণ কর্মী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবস্থায় বলেন, রাহুলজি যখন দিনমজুর, ট্রাক চালক বা সবজি বিক্রেতাদের পাশে দাঁড়ান, তখন আমাদেরও আশা হয়। তিনি যদি তাঁদের কথা ভাবেন, তবে আমাদের কথাও ভাববেন — এমনটা বিশ্বাস করতে চাই।
তবে আশার পাশাপাশি ক্ষোভও রয়েছে। একজন দীর্ঘদিনের কর্মী বলেন, আমরা ১৯৭৮ সাল থেকে এখানে আছি। সনিয়া গান্ধি এক সময়ে আমাদের পরিবারের মতো দেখতেন। বিয়ে বা কোনও বিশেষ অনুষ্ঠানে তাঁর উপহার আমাদের মনে করিয়ে দিত, আমরা দলের অংশ। কিন্তু আজ সেই পরিবার কোথায়?
কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের কাছে বাংলোটি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে এই কর্মীরা তাঁদের বাসস্থানের নিরাপত্তাও হারাতে চলেছেন। তাঁদের কাছে এখন ভাঙা স্মৃতি এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতই বাকি।
অতীতে দলের প্রতি তাঁদের অবদানের কথা স্মরণ করে একজন প্রবীণ কর্মী বলেন, এক সময়ে আমরা মাসে মাত্র ৮০০ টাকা বেতনে কাজ করতাম। এখন আমাদের মূল্য কেউ বোঝে না। আমাদের কি এভাবেই ভুলে যাবে কংগ্রেস?
২৪, আকবর রোড থেকে ইন্দিরা ভবনে যাওয়ার এই যাত্রা শুধু একটি স্থানান্তর নয়; এটি এক অদৃশ্যমান মানসিক বিচ্ছিন্নতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কংগ্রেসের পুরনো কর্মীদের প্রতি দলের এই অবজ্ঞা কি কেবলই আর্থিক সংকটের ফল, নাকি এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক সমীকরণের পরিবর্তন? প্রশ্ন রয়ে গেল।