ধারে ভারে ক্রমেই বড় শক্তি হয়ে উঠছে চিন। লাল দেশের আগ্রাসী নীতি মাঝে মধ্যেই মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের। ক্ষমতায় এসেই বেজিংকে বাণিজ্যের পাশাপাশি তার আগ্রাসী নীতিতে ধাক্কা দিতে চাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই লক্ষ্যেই জানা যাচ্ছে এবার ভারতকে দক্ষিণ চিন সাগরে নতুন সামরিক গোষ্ঠীর অংশ করে নেওয়া হতে পারে।
আলোচিত এই গ্রুপটি হল ‘স্কোয়াড’ – বর্তমানে যার সদস্য হল জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফিলিপাইন। এই গ্রুপ এখন ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে এতে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা করছে। যদিও ইতিমধ্যেই ‘কোয়াড’ গ্রুপে রয়েছে ভারত।২০০৭ সালে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের দাদাগিরি রুখতে তৈরি হয়েছিল কোয়াড্রিল্যাটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ বা ‘কোয়াড’। ওই সামরিক জোটের সদস্য ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ফিলিপাইনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল রোমিও এস. ব্রাওনার বলেছেন, দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতির কারণে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ফিলিপাইন এবং জাপান। বেইজিংএর মোকাবিলা করতে ও তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যেও কাজের ভাবনা এগোচ্ছে। তবে স্কোয়াড এখনও একটি অনানুষ্ঠানিক গোষ্ঠী হলেও এর সদস্য দেশগুলো এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ চিন সাগরে যৌথ সামুদ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।সদ্য শেষ হওয়া রাইসিনা সংলাপে জেনারেল ব্রাওনার জানিয়েছেন, “জাপান এবং আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে আমরা ভারত এবং সম্ভবত দক্ষিণ কোরিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য স্কোয়াড সম্প্রসারণের চেষ্টা করছি,”
সরাসরি চিনকে তাদের শ্ত্রু বলে উল্লেখ করে জেনারেল ব্রাওনার আরও বলেন যে স্কোয়াডের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে ফিলিপাইন তার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।এর মধ্যে রয়েছে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি, যৌথ অনুশীলন এবং অভিযানের ক্ষেত্রে চার দেশের মধ্যে সহযোগিতা। এই গ্রুপে ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে সম্ভাব্য আমন্ত্রণের কথা এমন এক সময়ে বলা হচ্ছে যখন ম্যানিলা এবং বেইজিং-এর মধ্যে সংঘাত বাড়ছে এবং দক্ষিণ চিন সাগরে ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষের মুখোমুখি হচ্ছে।
এলাকার দেশগুলোর অভিযোগ চিন একতরফাভাবে দক্ষিণ চিন সাগরের প্রায় পুরো অংশকে তার নিজস্ব অঞ্চল হিসেবে দাবি করছে। অভিযোগ বেজিং আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইনকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে চলেছে। বেইজিং – এর এমন সমগ্র সমুদ্রকে তার একচেটিয়া অর্থনৈতিক, কৌশলগত এবং সামরিক অঞ্চল হিসেবে ব্যবহার করা ২০১৬ সালের আন্তর্জাতিক এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘের রায়ের পরিপন্থী। পাশাপাশি বেইজিং ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই এবং ভিয়েতনামের সার্বভৌমত্বের দাবিকেও উপেক্ষা করে চলেছে। আসলে দক্ষিণ চীন সাগর হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্য রুটগুলির মধ্যে একটি, যেখানে বার্ষিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি বাণিজ্য প্রবাহ দেখা যায়। এর গোটাটাই কব্জা করতে চায় চিন।
এই মুহূর্তে দক্ষিণ চিন সাগরে সামরিক মহড়া জোরদার করেছে বেজিং। গত কয়েকমাস ধরে তাইওয়ান সীমান্তেও একাধিকবার অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে চিনা যুদ্ধবিমান ও রণতরী। যা নিয়ে আমেরিকা ও চিনের মধ্যে সংঘাত আরও তীব্র হচ্ছে। তাই চিনের গা জোয়ারি রুখতে স্কোয়াডকেই নতুন করে সাজাতে চাইছে ওয়াশিংটন। কোয়াডের মত তাতে পাশে পেতে চাইছে এশিয়ার অন্যতম ক্ষমতাধর ভারতকে।সেই লক্ষ্যটাই দিল্লিতে রাইসিনা ডায়ালগে এসে উল্লেখ করে গেছেন জেনারেল ব্রাওনার ।
Leave a comment
Leave a comment