ফি বছরের মত এবারও প্রকাশিত হল বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের নাম।আর প্রতিবারের মত এবারও এই তালিকার শীর্ষে থাকল ফিনল্যান্ডের নাম।টানা আট বছর ধরে প্রথম স্থান ধরে রেখেছে এই স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশ।ফিবছর রাষ্ট্রসঙ্ঘের উদ্যোগে ২০ মার্চ পালিত হয় আন্তর্জাতিক সুখ দিবস।আর এই সুখ দিবস উপলক্ষ্যেই প্রকাশিত হয়েছে এবারের তালিকা।
পকেটে মোটা মানিব্যাগ থাকলেই কী সুখী? আবার অনেকে বলেন ওইটাই অসুখের উৎস।সুখ যে আসলে কী সে প্রশ্নের উত্তর খুব গোলমেলে।সুখ ব্যাপারটাই একেক জনের কাছে একেক রকম। এ প্রশ্নের উত্তর হাজার জনের কাছ থেকে হাজার রকম আসতে পারে। তবুও ফি বছর একটা নির্দিষ্ট দিনে পালিত হয় আন্তর্জাতিক সুখ দিবস। প্রতিবছরের ২০ মার্চ যে বিশ্ব সুখ দিবস পালন করা হয়, তার প্রস্তাবে রাষ্ট্রসঙ্ঘের বক্তব্য ছিল, ‘অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সংগত ও ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতির অবতারণা, যা বিশ্বের সব মানুষের সুখ ও কল্যাণকে উৎসাহিত করবে।’ অর্থাৎ সেই বিচারে রাষ্ট্রসঙ্ঘের হিসেবে সুখের ক্ষেত্রে অর্থের গুরুত্ব প্রাধান্য পেয়েছে।
২০১২ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ২০ মার্চকে আন্তর্জাতিক সুখ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। স্থায়ী উন্নয়ন ও বিশ্ব শান্তির প্রচারে সুখ ও কল্যাণের গুরুত্ব স্বীকার করে নিতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়। আর এই সবের উপর ভিত্তি করেই ফি বছর প্রকাশ পায় ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট’।এবারের তালিকায় টানা অষ্টম বছরের মতো ফিনল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ, এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলোও কাছাকাছি জায়গায় থেকে গেছে। যেমন ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড এবং সুইডেন – শীর্ষ চারটি দেশ – ২০২৪ সালের মতো একই ক্রমে রয়েছে। পাশাপাশি নরওয়ে আবারও ৭ম স্থানে রয়েছে।
আসলে সুখী দেশের তালিকা করার সময় মানুষের সুখের নিজস্ব মূল্যায়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে শূন্য থেকে ১০ সূচকে নম্বর পরিমাপ করা হয়। এর সঙ্গে যাচাই করে হয় প্রতিটি দেশের মানুষের ব্যক্তিগত সুস্থতার অনুভূতি, ব্যক্তিগত স্বাধীনতার চর্চা, উদারতা, মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি ও দুর্নীতির মাত্রা। আর এখানেই দেখা যায় ফিনল্যান্ডের মতো দেশগুলোর বাসিন্দারা সর্বজনীন এবং উচ্চমানের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সহায়তা ব্যবস্থা থেকে উপকৃত হচ্ছে। এছাড়াও সেখানে সুখ-সমৃদ্ধির অসমতাও কম।
২০২৫ সালের বিশ্বের ২০টি সবচেয়ে সুখী দেশ
১. ফিনল্যান্ড
২. ডেনমার্ক
৩. আইসল্যান্ড
৪. সুইডেন
৫. নেদারল্যান্ডস
৬. কোস্টা রিকা
৭. নরওয়ে
৮. ইসরায়েল
৯. লুক্সেমবার্গ
১০. মেক্সিকো
১১. অস্ট্রেলিয়া
১২. নিউজিল্যান্ড
১৩. সুইজারল্যান্ড
১৪. বেলজিয়াম
১৫. আয়ারল্যান্ড
১৬. লিথুয়ানিয়া
১৭. অস্ট্রিয়া
১৮. কানাডা
১৯. স্লোভেনিয়া
২০. চেক প্রজাতন্ত্র
এবারের তালিকায় লাতিন আমেরিকার দুটি দেশ – কোস্টা রিকা (৬ষ্ঠ) এবং মেক্সিকো (১০ম) – ২০২৫ সালের রিপোর্টে প্রথমবারের মতো শীর্ষ ১০-এ ঢুকে পড়েছে।এছাড়া সেরা সুখী ১০ দেশের তালিকায় নেদারল্যান্ডস (৫ম), ইসরায়েল (৮ম) এবং লুক্সেমবার্গ (৯ম) শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে।
এত সুখী দেশের তালিকায় ভারত কোথায়? ২০২৪ সালে সুখী দেশের তালিকায় ১২৪ নম্বর স্থানে থাকা ভারত এ বার ১১৮ নম্বরে উঠে এসেছে। যদিও সকলকে অবাক করে পড়শি পাকিস্তান রয়েছে ১০৯ নম্বরে। শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ রয়েছে যথাক্রমে ১৩৩ এবং ১৩৪ নম্বর স্থানে। তালিকায় চিন রয়েছে ৬৮ নম্বর স্থানে। তবে এবছর হ্যাপিনেস রিপোর্টে বড় ধাক্কা খেয়েছে ট্রাম্পের দেশ।গত বছর প্রথমবারের মতো শীর্ষ ২০-এর বাইরে চলে যাওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে ২৪তম স্থানে রয়েছে।অন্যদিকে গত এক দশক ধরে সুখের মাত্রা হ্রাস পাওয়া কানাডা ১৮তম স্থানে থেকে শীর্ষ ২০-এর মধ্যে রয়েছে।
২০২৫ এর ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট’-এ সুখের তালিকায় সর্বনিম্ন পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান (১৪৭তম), সিয়েরা লিওন (১৪৬তম), লেবানন (১৪৫তম), মালাউই (১৪৪তম) এবং জিম্বাবুয়ে (১৪৩তম)।