ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবে সব ধরনের ফলের রস যে উপকারে আসে, তা নয়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, কিছু নির্দিষ্ট ফলের রস অতিরিক্ত পরিমাণে পান করলে তা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কারণ এই রসগুলিতে উচ্চমাত্রায় প্রাকৃতিক চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বিশেষভাবে তিনটি ফলের রস সম্পর্কে সতর্ক করেছেন, যেগুলি অতিরিক্ত পরিমাণে পান করা বিপজ্জনক হতে পারে।
প্রথমত, আঙুরের রস। আঙুরের রসে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকে। একটি মাঝারি আকারের আঙুরে প্রায় ২৩ গ্রাম চিনি থাকে। আঙুরের রস পান করলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়, যা ইনসুলিনের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। এই কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় আঙুরের রসে অতিরিক্ত চিনি যোগ করা হয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা আরও দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে।
দ্বিতীয়ত, আমের রস। আমে প্রাকৃতিক চিনি এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি থাকে। একটি মাঝারি আকারের আমে প্রায় ৪৫ গ্রাম চিনি থাকে। আমের রস পান করলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রবেশ করে এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায়। যারা নিয়মিত আমের রস পান করেন, তাদের মধ্যে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়া আমের রস অতিরিক্ত পান করলে ওজন বেড়ে যেতে পারে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি আরও বাড়ায়।
তৃতীয়ত, কলার রস। কলাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এবং প্রাকৃতিক চিনি থাকে। একটি মাঝারি আকারের কলায় প্রায় ২৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ১৪ গ্রাম চিনি থাকে। কলার রস পান করলে শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রবেশ করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায়। কলার রসে ফাইবারের পরিমাণ কম থাকায় এটি হজমে সহায়ক নয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অসুবিধা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফলের রসের পরিবর্তে সম্পূর্ণ ফল খাওয়া বেশি স্বাস্থ্যকর। পুরো ফলে ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ায়। এছাড়া সম্পূর্ণ ফল খাওয়ার ফলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা অনুভূতি থাকে, যা অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন যে, ফলের রস তৈরির সময় যদি অতিরিক্ত চিনি যোগ করা হয়, তাহলে তা স্বাস্থ্যের জন্য আরও ক্ষতিকর হতে পারে। অনেকে মনে করেন যে, ফ্রেশ ফলের রস স্বাস্থ্যকর, তবে এতে চিনি যোগ করা হলে তা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই ফলের রস পান করার আগে তা কতটা প্রাকৃতিক এবং চিনি যোগ করা হয়েছে কি না, তা যাচাই করে নেওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞরা আরও পরামর্শ দিয়েছেন যে, ফলের রসের বিকল্প হিসেবে ডাবের জল, পাতলা লেবুর শরবত বা তাজা শাকসবজির রস খাওয়া ভালো। এই ধরনের পানীয়তে চিনি কম থাকে এবং এটি শরীরের জন্য উপকারী। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বা ঝুঁকির মুখে রয়েছেন, তাদের জন্য ফলের রস পান করার পরিবর্তে সম্পূর্ণ ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ফল খাওয়ার সময় পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। যেকোনো ধরনের ফল বা ফলের রস অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। তাই ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমিতি বজায় রাখা এবং সম্পূর্ণ ফলের প্রতি গুরুত্ব দেওয়াই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য জরুরি।