ক্রমবর্ধমান সংকটের মধ্যে নতুন ট্রেন অপারেটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিলেও, শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করেছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এর ফলে ভবিষ্যতে কলকাতা মেট্রোর নিয়মিত পরিষেবা বজায় রাখা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে দানা বাঁধছে। বিশেষত, এই মাসের শেষেই ১৩ জন অভিজ্ঞ চালক অবসর নিতে চলেছেন, যা সংকটকে আরও তীব্র করে তুলবে।
এই মুহূর্তে কলকাতা মেট্রো চারটি প্রধান রুটে পরিষেবা দিচ্ছে— উত্তর-দক্ষিণ করিডোর (ব্লু লাইন), ইস্ট-ওয়েস্ট করিডোর (গ্রিন লাইন), জোকা-মাঝেরহাট রুট (পার্পল লাইন) এবং নিউ গড়িয়া-রুবি সংযোগ (অরেঞ্জ লাইন)— এই চারটি রুটে বর্তমানে কলকাতা মেট্রোর পরিষেবা চালু রয়েছে। এরই মধ্যে নিউ গড়িয়া থেকে বিমানবন্দর এবং নোয়াপাড়া থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত দুটি নতুন রুট চালুর প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি, ইস্ট-ওয়েস্ট করিডোরে শিয়ালদহ থেকে এসপ্লানেড পর্যন্ত সম্প্রসারণের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
নতুন রুটগুলি চালু হলে মেট্রোর চালকের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু বর্তমান জনবল সেই প্রয়োজন মেটানোর পক্ষে যথেষ্ট নয়। এই সংকট সামলাতে দক্ষিণ-পূর্ব রেল থেকে ২৫ জন চালককে নেওয়া হয়েছে, যাঁরা এখন প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছেন।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ বিকল্প উপায়ে চালকের ঘাটতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। ট্রেন শান্টিংয়ের দায়িত্বে থাকা কিছু কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চালক হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে এত কিছুর পরেও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। কর্মী মহলেও বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
তবে, কর্তৃপক্ষের দাবি, আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় এই সংকট অনেকটাই কমানো যাবে। নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর ও জোকা-মাঝেরহাট রুটে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যা ট্রেন চালানোর দায়িত্ব অনেকটাই স্বয়ংক্রিয় করবে এবং চালকদের উপর নির্ভরতা কমাবে। এর ফলে পরিচালনাগত চাপও কিছুটা হ্রাস পাবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে সরাসরি চালক নিয়োগের পরিবর্তে ট্রেন অপারেটর কাম স্টেশন কন্ট্রোলার নিয়োগ করা হবে, যাতে একসঙ্গে একাধিক দায়িত্ব সামলানো সম্ভব হয়।
তবে বাস্তব চিত্র অন্য কথা বলছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শুধুমাত্র ইস্ট-ওয়েস্ট করিডোরেই স্বাভাবিক পরিষেবা বজায় রাখতে কমপক্ষে ৫০-৬০ জন চালক প্রয়োজন, কিন্তু বর্তমানে সেখানে কর্মরত চালক রয়েছেন মাত্র ৩৫ জন।
এই সংকট মোকাবিলায় চুক্তিভিত্তিক ট্রেন অপারেটর নিয়োগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে এত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও প্রশ্ন থেকেই যায়— চালকের ঘাটতি কি ভবিষ্যতে কলকাতা মেট্রোর গতিকে শ্লথ করে দেবে?
Leave a comment
Leave a comment