সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
জানেন কি সুনীতা উইলিয়ামসের ঘরে ফেরাতে খরচ কত? একটি জনবহুল দেশে মহাকাশ গবেষণায় যত টাকা বাজেট বরাদ্দ হয় তার প্রায় সমপরিমাণ টাকা খরচ করে ব্রহ্মাণ্ড থেকে মর্ত্যলোকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে সুনীতাদের। ভাবতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। ২০২৪ সালে সুনীতাদের মহাকাশে পাঠাতে রকেট উৎক্ষেপণের জন্য খরচ হয়েছিল ৬৯ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৫৯৫ কোটি টাকা। মার্কিন ধনুকবের ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্স এর ফ্যালকন ৯ রকেট মহাকাশযান সুনীতা উইলিয়ামসের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে ড্রাগন ক্যাপসুলটিকে মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছে দিয়েছিল। আর সুনীতারা মহাকাশে পাঠানো এবং ড্রাগন ক্যাপসুলে চড়ে পৃথিবী বুকে ফিরিয়ে আনতে সব মিলিয়ে মোট খরচ ধরলে তা ধার্য হয় প্রায় ১৪০০ কোটি মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। উল্লেখযোগ্য, মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে আগামী অর্থবর্ষ অর্থাৎ ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরে ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেটে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১২,৪১৬ কোটি টাকা। তথ্যের খাতিরে, ভারতের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে মহাকাশ গবেষণায় যে বাজেট বরাদ্দ ধরা হয় সুনিতাদের ঘরে ফেরাতে প্রায় সমপরিমাণ টাকা খরচ করেছে নাসা। স্বাভাবিকভাবেই এটা অনুমেয় যে মহাকাশ গবেষণা বা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে মার্কিন মুলুকে সরকারি স্তরে যে গুরুত্ব দেওয়া হয় তা এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। আর এ থেকেই এদেশের বিজ্ঞানী মহলেও দাবি উঠছে যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যেদিকে এগোচ্ছে অথবা ভবিষ্যতে বিজ্ঞানকে সফলভাবে কাজে লাগিয়ে যদি দেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হয়। তাহলে মহাকাশ বিজ্ঞান ও গবেষণার ক্ষেত্রে আরো বেশি বরাদ্দের প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে চন্দ্রায়ন ৩ অভিযানের সাফল্য ভারতের মহাকাশ গবেষণার উন্নতিদের সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। অথচ ২০২১-২২ আর্থিক বছরে ভারতের মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে যে বাজেট বরাদ্দ হয়েছিল সে তুলনায় ২০২৫-২৬ অর্থ বর্ষে মহাকাশ গবেষণা খাতে বাজেট বরাদ্দ কমে গিয়েছে। নাসায় নিযুক্ত বাঙালি বিজ্ঞানী গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলছেন ” একটি জাতি বা একটি দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের ক্ষেত্রে মহাকাশ হলো আদর্শ বিনিয়োগের জায়গা এটা একটি দেশের সরকারকে বুঝতে হবে। বর্তমানে মোবাইল বা ডিজিটাল পরিষেবা বা তার প্রযুক্তি যেভাবে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে সেই ধারার অগ্রগতি বজায় রাখতে মহাকাশ বিজ্ঞান অপরিহার্য। তাই মহাকাশ বিজ্ঞানকে আরো উৎকর্ষতারপর্যায়ে নিয়ে যেতে বাজেট বরাদ্দ আরো বাড়ানো প্রয়োজন।” মহাকাশ বিজ্ঞানের নিত্য নতুন গবেষণা এবং নতুন উদ্ভাবন করার কাজে যথেষ্ট দক্ষ ইসরো। তার সঙ্গে প্রয়োজন নতুন প্রজন্মকে এই মহাকাশ বিজ্ঞান বা তার তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে আরো বেশি করে সচেতন করানো। এজন্য মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে যেমন বিশেষ পাঠ্যক্রম চালু করতে হবে তার পাশাপাশি সামাজিক স্তরে সাধারণ মানুষের মধ্যে মহাকাশ সম্পর্কে বোধশক্তি আরো বাড়ানোর কাজে ইসরো কে নিয়োগ করতে হবে এবং গবেষণার কাজকে আরো দ্বিগুণভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যদিও রাজনৈতিক স্তরে প্রশ্ন ওঠে যে দেশের মানুষের একটা বড় অংশের রুটি রুজির যোগান থাকে না সে দেশে মহাকাশের পেছনে এই বাড়তি খরচ কি বাহুল্য নয় ? গৌতমবাবুদের মতে ” আগামী দিনে একটি দেশের উন্নয়ন সূচকের অন্যতম শর্ত হতে চলেছে মহাকাশ বিজ্ঞান ও গবেষণায় অগ্রগতি। এই যে আজ সবাই স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন বা তার প্রযুক্তিকে কাজে লাগাচ্ছেন এটাও মহাকাশ বিজ্ঞানকে সফলভাবে কাজে লাগানোর ফসল এই বিষয়টা কিন্তু সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে বুঝতে হবে।”
বস্তুত, আমেরিকা চীন জাপান রাশিয়া এই উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে মহাকাশ বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নিরিখে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে ভারত। ভারতের মেধা শক্তি যেমন গোটা বিশ্বের কাছে একটি অন্যতম সম্পদ সেই মেধা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়িয়ে দেশকে আরো উন্নত করার চেষ্টা করার কাজেই দেশের সরকারকে আরো ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করছেন ভারতীয় বিজ্ঞানী মহল।