শেখ হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশে এখনও সুস্থিতি ফেরেনি।অভিযোগ আন্দোলনকারী ছাত্রদের সমর্থনে তৈরি হওয়া অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে।পাশাপাশি বাংলাদেশ জুড়ে সংখ্যালঘু অত্যাচারের পাশাপাশি ভেঙে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা,মাত্রা ছাড়িয়েছে মূল্যবৃদ্ধি। এইসঙ্গে মাথাচাড়া দিচ্ছে কট্টরপন্থী জঙ্গিবাদ।পরিস্থিতি যে খুব ভাল নয় তা হয়ত বুহতে পেরেই বিডিআর বিদ্রোহের শহিদ দিবসে প্রাক্তন সেনাদের ক্লাবের অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার সকলকে সতর্ক করে বলেন, “আমাদের অন্য কিছু ভাবতে বাধ্য করবেন না। এমন পরিস্থতি সৃষ্টি করবেন, যাতে আমাদের অন্য কিছুর কথা ভাবতে হয়।”
একইসঙ্গে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার মতো কোনও মন্তব্য না কার পরামর্শও দেন সেনাপ্রধান। কিন্তু সে কথা শোনা হয় নি।সম্প্রতি বাংলাদেশের সেনার দিকেই আঙুল তুলে বিস্ফোরক দাবি করেছেন এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। তাঁর দাবি শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফেরাতে সেনা নাকি চাপ সৃষ্টি করেছে তাঁদের ওপর। এর জন্যে ক্যান্টনমেন্টে নাকি গোপন বৈঠকও হয়েছিল। সেখানে সেনার উচ্চপদস্থ এক কর্তা তাদের ধমক দেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। শুক্রবার হাসনাত আবদুল্লাহ এক পোস্টে লেখেন, “ ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।” আর এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই নতুন করে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
আর এহেন পরিস্থিতিতেই মুখ খুলেছে বাংলাদেশ সেনা।হিন্দুস্থান টাইমসের খবর অনুযায়ী সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজকে এই বিষয়ে সেনাবাহিনী বলেছে, ‘হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়। এটা শুধু রাজনৈতিক স্টান্টবাজি।’ সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসনাতের দাবি মতো গত ১১ মার্চ সেই বৈঠকটি সত্যি হয়েছিল। সেদিন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গেই হাসনাতদের বৈঠক হয়েছিল। তবে আওয়ামি লিগকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফেরানোর জন্যে চাপ দেওয়ার যে অভিযোগটি উঠেছে, সেই বিষয়টি সেনার তরফে অস্বীকার করা হয়েছে। সেনার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সারজিস এবং হাসনাতই চেয়েছিলেন বৈঠক করতে। সেই মতো সেনাপ্রধান তাঁদের সময় দিয়েছিলেন।
এদিকে সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে যে পোস্ট করেন, তাতে দ্বিমত প্রকাশ করে আবার পোস্ট লরেছেন এনসিপির আরেক সংগঠক সারজিস আলম। রোববার পোস্টে সারজিস আলম সেনার মতকে সমর্থন করেই লিখেছেন যে, ‘সেদিন (১১ মার্চ) সেনানিবাসে আমাদের ডেকে নেওয়া হয়নি।’তিনি আরও লিখেছেন, “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের” জন্য “চাপ দেওয়ার” যে বিষয়টি এসেছে সেখানে “চাপ দেওয়া হয়েছে” এমনটি আমার মনে হয়নি। বরং রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ না আসলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সমস্যার সৃষ্টি হবে সেটা তিনি অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলছিলেন।
তবে ছাত্রনেতা হাসনাত ২২ মার্চ একটি জনসভাতে সেনাকে আক্রমণ শানিয়েছিলেন।সেখানে এনসিপি নেতা বলেছিলেন, ‘সেনাবাহিনীর প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন আছে। আপনাদের যাদের কাজ ক্যানটনমেন্টে, তাঁরা ক্যানটমেন্টেই থাকুন।… কিন্তু আমরা বলতে চাই, আপনারা গত ১৬ বছর ধরে ক্যানটনমেন্ট থেকে যেভাবে রাজনীতিতে নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছেন, বিভিন্ন দফতরের মাধ্যমে যেভাবে রাজনীতিতে নোংরা হস্তক্ষেপ করেছেন… ২০২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে শুধুমাত্র রাজনীতিবিদরা।’
আর সেনার বিরুদ্ধে এভাবে বারবার আঙুল তোলার ব্যাপারটা মোটেই সহজ সরল পথে হাঁটবে না বলে মনে করছেন অনেকে।হাসনাতের এই সব দাবি ভিত্তিহীন এবং ভুয়ো বলে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ সেনা।রাজনৈতিক দলগুলোর একটা অংশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুললেও বিএনপি জানিয়ে দিয়েছে, সংশোধিত আওয়ামি লিগ নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের দিক থেকে কোনও আপত্তি নেই। উপযুক্ত শাসনহীন, নির্বাচন হীন বাংলাদেশ সব মিলিয়ে বড় জটিলতার পথে এগিয়ে চলেছে বলেই আশঙ্কা করছেন অনেকে।
Leave a comment
Leave a comment