ঈশান কিষাণ নিজের ব্যাটিং দক্ষতা দিয়ে নতুন দলে যোগ দিয়েই বাজিমাত করেছেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু ঈশান ব্যাট হাতে সেই সিদ্ধান্তের যোগ্য জবাব দিয়েছেন। রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে মাত্র ৪৫ বলে ১০৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন ঈশান, যেখানে ছিল ৮টি চার এবং ৯টি ছক্কা। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ৬ উইকেটে ২৮৬ রান সংগ্রহ করে, যা আইপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলগত স্কোর।
ঈশানের ইনিংস শুরুটা ছিল ধীরগতির। প্রথম কয়েক ওভারে তিনি পরিস্থিতি বুঝে খেলছিলেন। কিন্তু একবার ছন্দ পেয়ে গেলে ঈশান প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর চড়াও হন। ইনিংসের ১৯তম ওভারে সন্দীপ শর্মাকে টানা দুটি ছক্কা হাঁকানোর পর ডাবল নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। সেঞ্চুরির পর ঈশান ব্যাট উঁচিয়ে মাঠে ছুটে যান, আর গ্যালারিতে হায়দরাবাদের মালকিন কাব্যা মারানকে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়তে দেখা যায়। এটি ঈশানের আইপিএল কেরিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি, যা তাঁকে আত্মবিশ্বাস জোগাবে।
ঈশানের পাশাপাশি হায়দরাবাদের ব্যাটিং লাইনআপে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। ট্র্যাভিস হেড ৩৯ বলে ৬৭ রান করেন, যাতে ছিল ৫টি চার ও ৪টি ছক্কা। হেনরিখ ক্লাসেন ২২ বলে ৩৪ রান করেন। নীতীশ কুমার রেড্ডি ৩০ রান করেন এবং অভিষেক শর্মা করেন ২৪ রান। হায়দরাবাদের ব্যাটিং ইনিংসে মোট ২২টি ছক্কা এবং ১৮টি চারের মার ছিল, যা প্রতিপক্ষ দলের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে।
রাজস্থান রয়্যালসের বোলাররা ঈশানের সামনে কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। তুষার দেশপান্ডে ৪ ওভারে ৩টি উইকেট নিলেও ৪০ রান খরচ করেন। মহেশ থিকশানা ৪ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন। সন্দীপ শর্মা ৪ ওভারে ৫০ রান দিয়ে ১টি উইকেট নেন। ঈশান একের পর এক বোলারকে আক্রমণ করে প্রতিপক্ষের রণনীতি ভেস্তে দেন।
ঈশানের এই দুর্দান্ত ইনিংস কেবল হায়দরাবাদকেই নয়, তাঁকেও ব্যক্তিগতভাবে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। আইপিএলে ঈশানের এমন ঝোড়ো সেঞ্চুরি ক্রিকেট মহলে আলোড়ন ফেলেছে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল, তা ঈশান প্রমাণ করে দিয়েছেন। নতুন দলে যোগ দিয়েই ঈশান নিজের দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাসের পরিচয় দিয়েছেন।
ম্যাচ শেষে ঈশান বলেন, “নতুন দলে যোগ দেওয়ার পর প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরি করা আমার কাছে স্বপ্নপূরণের মতো। আমি সবসময় আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। দলের প্রতি অবদান রাখতে পেরে আমি খুশি।” কোচ এবং সতীর্থরাও ঈশানের এই পারফরম্যান্সে খুশি।
হায়দরাবাদের এই বিশাল স্কোরের ফলে দলটির আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ঈশানের এই সেঞ্চুরি শুধুমাত্র হায়দরাবাদের জয়ের সম্ভাবনাই বাড়ায়নি, বরং তাঁর ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারকেও আরও মজবুত করেছে। ঈশানের এই ইনিংস ভবিষ্যতে তাঁর জন্য বড় টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। তাঁর ঝোড়ো ব্যাটিং হায়দরাবাদের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের জন্য একটি বড় শক্তি হয়ে উঠবে। প্রতিপক্ষ দলের জন্য এটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
ঈশান কিষাণের এই পারফরম্যান্স ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে দীর্ঘদিন গেঁথে থাকবে। তাঁর ব্যাটিং মুগ্ধ করেছে সমর্থকদের। আইপিএলের ইতিহাসে এটি অন্যতম সেরা ইনিংস হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। হায়দরাবাদের সমর্থকরাও ঈশানের এই দুর্দান্ত ইনিংসের পর বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। ঈশান এই ফর্ম বজায় রাখলে হায়দরাবাদ এবারের আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে অন্যতম প্রধান প্রতিযোগী হয়ে উঠবে।