পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লন্ডন সফর ঘিরে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের কিছু চিকিৎসক কেলগ কলেজের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর জোনাথান মিচিকে একটি চিঠি লিখেছেন। এই চিঠিতে মমতার আমন্ত্রণ বাতিলের অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিঠিতে দাবি করা হয়েছে যে, মমতার আমন্ত্রণ বাতিল করা উচিত কারণ তাঁর লন্ডন সফর পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে এই চিঠির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই পালটা ব্যবস্থা নেয় ‘দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ’ নামের একটি সংগঠন। সংগঠনের পক্ষ থেকে কেলগ কলেজের প্রেসিডেন্টকে পালটা চিঠি পাঠিয়ে মমতার আমন্ত্রণ বহাল রাখার অনুরোধ জানানো হয়। সংগঠনের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা বাংলার উন্নয়ন মডেল আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরার একটি বিরল সুযোগ।
সরকারি সূত্রের দাবি, মমতার এই সফর ঘিরে ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সরকারের হাতে এসেছে এমন কিছু হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট এবং ইমেল, যেখানে এই সফরকে বাধাগ্রস্ত করার পরিকল্পনার উল্লেখ রয়েছে। সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, এই ষড়যন্ত্রের পেছনে কিছু রাজনৈতিক মহল সক্রিয় রয়েছে, যারা মমতার লন্ডন সফরকে ঘিরে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়। তবে মমতা লন্ডনে পৌঁছানোর পর কোনও বিক্ষোভের মুখে পড়েননি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্থানীয় সময় ২৩ মার্চ সকালে লন্ডনে পৌঁছান। তিনটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাঁকে বক্তৃতার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কেলগ কলেজ ছাড়াও কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। কেলগ কলেজে মমতার বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হবে ২৭ মার্চ।
এর আগে ১৭ মার্চ গণশক্তি পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যেখানে দাবি করা হয় যে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে মমতার বক্তৃতা সংক্রান্ত কোনও তথ্য নেই। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরেই বিতর্ক চরমে ওঠে। তবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুধু কেলগ কলেজ নয়, আরও একাধিক ব্রিটিশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মমতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর বাংলার উন্নয়ন মডেল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করেছিলেন। এর পর মার্চ মাসের শুরুতে লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্সের প্রাক্তন ছাত্র দীপ্তেন্দু রায় মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান। এছাড়া কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইল এন্ড ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর সোফিয়া কোল্লিগননও তাঁকে একটি আলোচনা সভায় অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।
মমতার এই সফর বিলম্বিত হয় হিথরো বিমানবন্দরের একটি কারিগরি সমস্যার কারণে। বিমানবন্দরটি প্রায় ১৮ ঘণ্টা বন্ধ ছিল, যার ফলে বিশ্বের প্রায় ১৩৫০টি উড়ান বাতিল করা হয়। মমতার এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানও বাতিল হয়। ফলে মমতা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে পরে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুধুমাত্র রাজনীতিবিদ হিসেবেই নয়, একজন লেখিকা এবং বাংলার উন্নয়নের মডেল হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাজ্য সরকারের মতে, এই সফর বাংলার উন্নয়ন মডেল এবং মমতার অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরার গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।
মমতার এই সফর ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে চাপানউতোর অব্যাহত রয়েছে। বিরোধী পক্ষের দাবি, এই সফর শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রচারের অঙ্গ। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, এটি বাংলার উন্নয়ন মডেলকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার কৌশল।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মমতার বক্তৃতা বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেলকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবে। এর মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সুযোগ তৈরি হবে বলে সরকারের আশা।