সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা পুলিশের বেহালা থানার অন্তর্গত স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার শাখা থেকে সংলগ্ন প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় শহরের ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ ডায়মন্ড হারবার রোডের উপর কোনও সিসি ক্যামেরা বসানো হয়নি। বেহালা থানা এলাকায় গভীর রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন সরকারপক্ষের আইনজীবী স্বয়ং। সরকারি আইনজীবীর এই তথ্যে কার্যত ‘তাজ্জব’ বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। একইসঙ্গে ফের একবার কলকাতা হাইকোর্টে বেআব্রু হল কলকাতা পুলিশের উদাসীনতা ও অপদার্থতা। বিশেষ করে বেহালায় ডায়মন্ডহারবার রোডের মতো ব্যস্ততম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় প্রায় দু কিলোমিটার অংশে সিসি ক্যামেরার নজরদারি না থাকা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন খোদ বিচারপতি? ” বেহালা তো দীর্ঘদিন আগেই কলকাতা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কলকাতা পুলিশ সেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে। তা সত্ত্বেও প্রায় দু কিলোমিটার এলাকায় সিসি ক্যামেরা নেই কেন? কলকাতা পুলিশ এমন কি কলকাতা পুরসভা তারা কি করছে?” সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চান বিচারপতি ঘোষ। উল্লেখযোগ্য যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবার দুর্ঘটনা এবং অভিযুক্ত ঘাতকের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখতে চায় পুলিশের কাছে। পুলিশ ফুটেজ দেখাতে তো পারেই এমনকি কোন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি ছাড়াই দেহের ময়নাতদন্ত সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে পুলিশ বলেও আদালতে অভিযোগ জানিয়েছে পরিবার। এ নিয়ে কলকাতায় পুলিশ কমিশনার এবং কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার ( অপরাধ) এর কাছে অভিযোগ জানান তারা। কিন্তু কোন ফল মেলেনি। অগত্যা পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতার অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় অসহায় পরিবার। আর আদালতের শুনানির সময় আসল রহস্য ফাঁস করেন সরকারপক্ষের আইনজীবী নিজেই। সিসি ক্যামেরাই নেই তো তার ফুটে মিলবে কোথা থেকে! হাইকোর্টে জানান সরকার পক্ষের আইনজীবীই। আর
কলকাতা পুলিশের পাশাপাশি কলকাতা পুরসভার এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতা প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে রাজ্যের বহু চর্চিত ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি সহ নাগরিক সুরক্ষাকেও।
বস্তুত, কলকাতার মেয়র থেকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার কলকাতার শহরজুড়ে সিসি ক্যামেরার নজরদারি নিয়ে মাঝেমধ্যেই ঘটা করে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। বহু ক্ষেত্রেই এই সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সূত্র ধরে বহু অপরাধের কিনারাও করেছে কলকাতা পুলিশ। পুলিশের গাফিলতি সংক্রান্ত একগাদা মামলা যখন হাইকোটে গড়িয়েছে তখন এই সিসি ক্যামেরা ফুটেজকে হাতিয়ার করেছে কলকাতা হাইকোর্টও। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বেহালার মত এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তায় সিসি ক্যামেরা না থাকার বিষয়টি হতবাক করেছে আদালতকেও। বছর দেড়েক আগে বেহালা থানার অন্তর্গত চৌরাস্তার কাছে কলকাতা পুরসভার ডাম্পারে একটি শিশু স্কুল পড়ুয়ার পিষে যাওয়ার ঘটনা আজও দগদগে। সেই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা কলকাতা জুড়ে ঘটনার ঘনঘটার জেরে কলকাতা পুলিশ ও কলকাতা পুরসভা এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পথ সুরক্ষা নিয়ে নানা ঢক্কানিনাদ করে। অথচ গর্জন-তর্জন যতটা করা হয়েছিল সে তুলনায় কাজের কাজ জে কিছুই হয়নি তা হাইকোর্টে আজকের এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বলে সরব হয়েছেন বেহালার বাসিন্দারাই।
