গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধ আবারও তীব্রতর হয়েছে। এর ফলে গাজায় ব্যাপক ব্যাপক প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটছে। ইসরায়েল সম্প্রতি বিমান হামলায় গাজার অন্তত দুটি প্রধান হাসপাতাল ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে তুর্কিয়ে নির্মিত একমাত্র ক্যান্সার হাসপাতালও রয়েছে। ইতিমধ্যে, জর্ডান ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে গাজা উপত্যকা থেকে হামাস এবং এর সামরিক শাখার ৩,০০০ সদস্যকে বহিষ্কারের পরিকল্পনা প্রস্তাব করছে। এই পরিকল্পনা যদি কার্যকর হয়, তাহলে হামাস সমর্থকদের গাজা থেকে বিতাড়িত করা হবে। এর ফলে গাজার সাধারণ মানুষ ইসরায়েলি সামরিক অভিযান থেকে রক্ষা পেতে পারে।
জর্ডানের প্রস্তাবের সঙ্গে পরিচিত মার্কিন ও ফিলিস্তিনি সূত্রের কথ উল্লেখ করে মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে যে, বহিষ্কার করা ব্যক্তিদের মধ্যে সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের পাশাপাশি হামাসের সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই পরিকল্পনায় একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে গাজার হামাস এবং অন্যান্য প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলিকে নিরস্ত্রীকরণেরও আহ্বান জানানো হয়েছে। এর ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকায় হামাসের শাসনের অবসান ঘটবে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের সুযোগ পাবে। তবে এই বিষয়ে জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা তীব্র হওয়ার ফলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ১৮ মার্চ, রমজান মাসের ভোরে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান একাধিক স্থানে বোমা বর্ষণ করে, যাতে ২০০ শিশু সহ প্রায় ৪০০ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন। এরপর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর ধারাবাহিক হামলায় আরও ৩০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান সংঘাতে ইসরায়েলি হামলায় মোট ৫০,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৮,০০০ শিশু। এছাড়া ১,১৩,০০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। যদিও এই পরিসংখ্যান কোনও স্বাধীন সংস্থার দ্বারা নিশ্চিত হয়নি, অনেক দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে। তবে, ইসরায়েল এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
সংঘাত নিরসনে কয়েক মাস আগে ইসরায়েল ও হামাস একটি তিন-পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল। চুক্তির প্রথম ধাপে সাময়িকভাবে যুদ্ধ বন্ধ হয়, যার লক্ষ্য ছিল গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার। কিন্তু ইসরায়েল দ্বিতীয় ধাপে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানায়। এতে হামাস আপত্তি জানিয়ে চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ কার্যকর করার আহ্বান জানায়। যুদ্ধবিরতির এই অচলাবস্থার মধ্যেই ইসরায়েলি বাহিনী নতুন করে হামলা শুরু করেছে, যা সংঘাতের আরও বিস্তারের আশঙ্কা তৈরি করেছে।