বর্তমানে কিডনির সমস্যা দেশের অন্যতম বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেবলমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক নয়, বরং শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও কিডনি রোগের প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং প্রযুক্তিনির্ভরতার কারণে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই সমস্যার হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কিডনি রোগের ঘটনা ১১.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপরে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এই বৃদ্ধির হার আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬.৩৮ শতাংশে। নেফ্রোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে (CKD) আক্রান্তের হার প্রায় ১৫.৩৪ শতাংশ, যেখানে শহুরে অঞ্চলে এই হার ১০.৬৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের পেছনে প্রধান কারণ হলো ভুল খাদ্যাভ্যাস, অনিয়মিত জীবনযাপন এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে অবহেলা।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানাচ্ছেন, শিশুরা যখন স্থূলতার শিকার হয়, তখন তাদের কিডনি স্বাভাবিক আকারের হলেও অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হয়। প্রতিদিন অতিরিক্ত জল বিশুদ্ধ করতে গিয়ে কিডনির উপর চাপ পড়ে, যা দীর্ঘমেয়াদে কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। ফলে শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে কিডনি সমস্যার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা মনে করেন, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করার মাধ্যমে এই সমস্যাকে অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। একজন সাধারণ মানুষ যদি দিনে ৩ লিটার জল পান করেন এবং দিনে পাঁচ হাজার পা হাঁটেন, তাহলে কিডনি সমস্যার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে এবং শিশুদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে বাড়তি নজর দিতে হবে। কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং পর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপের গুরুত্ব বোঝাতে হবে। স্কুল এবং পরিবারকেও এই বিষয়ে আরও উদ্যোগী হতে হবে, যাতে পরবর্তী প্রজন্মকে কিডনি সমস্যার ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করা যায়।