মহেন্দ্র সিং ধোনির প্রতিফলনশীলতা ৪৩ বছর বয়সেও অবিশ্বাস্য। রবিবারের ম্যাচে সূর্যকুমার যাদবকে চোখের পলকে স্টাম্পিং করে সবাইকে চমকে দিলেন তিনি। তাঁর হাতের বিদ্যুৎগতির ও নিখুঁত গ্লাভ ওয়ার্ক আবারও প্রমাণ করল, কেন তিনি এখনও অন্যতম সেরা উইকেটকিপার।
প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ঙ্কর হলেও ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য ধোনির এমন দক্ষতা দেখার মুহূর্ত ছিল দারুণ উপভোগ্য। বয়স বাড়লেও তাঁর অভিজ্ঞতা ও ক্ষিপ্রতা যেন দিন দিন আরও শাণিত হচ্ছে। ধোনির এই দুর্দান্ত স্টাম্পিং মুহূর্তটি ম্যাচের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছিল।
মাত্র ০.১২ সেকেন্ড! ব্যাটের গতিপথ শেষ হওয়ার আগেই স্টাম্পের বেল ছিটকে গেল। চোখের পলকে ঘটে যাওয়া এই অবিশ্বাস্য মুহূর্ত ক্রিকেটপ্রেমীদের মুগ্ধ করলেও ম্যাচ শেষে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক একে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি। তাঁর মতে, এটি নিছকই খেলার স্বাভাবিক অংশ।
মাঠে সেই ঝলক দেখে ক্রিকেটবিশ্বে আলোচনার ঝড় উঠলেও তিনি বরাবরের মতোই নির্লিপ্ত। নিজের দক্ষতা বা অসাধারণ ক্ষিপ্রতাকে আলাদাভাবে তুলে ধরতে একদমই আগ্রহী নন। তাঁর ভাষায়, “এটা তো আমার কাজ, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।”
যদিও ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন দ্রুত প্রতিক্রিয়া কেবল অভিজ্ঞতা ও কঠোর পরিশ্রমের ফল। প্রতিটি ম্যাচে যে নিয়ন্ত্রিত মনোযোগ ও নিখুঁত কলা-কৌশল প্রয়োজন, তিনি ঠিক সেটাই করে দেখিয়েছেন।
এই অনন্য মুহূর্তকে ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা মুহূর্ত হিসেবে দেখছেন অনেকেই, কিন্তু খোদ নায়ক নিজেই একে সাধারণ ঘটনা বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে ভক্তদের কাছে এটি নিঃসন্দেহে এক বিস্ময়কর দৃশ্য, যা বহুদিন মনে রাখবে ক্রিকেট দুনিয়া।
ধোনির এই স্টাম্পিং নিয়ে ক্রিকেট মহলে উত্তেজনা থাকলেও, তিনি নিজে এটাকে বড় করে দেখতে চান না। বরং উইকেটকিপিংকে সরল রাখার পক্ষপাতী তিনি। ধোনির ভাষায়, “আমি সবসময় স্থির থাকতে পছন্দ করি। উইকেটের পিছনে বেশি নড়াচড়া করাটা আমার ধরনে নেই। আমি বিশ্বাস করি, বলটা ঠিকভাবে হাতে জমলেই কাজ হয়ে যাবে।”
এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ধোনি বলেন, “ওই স্টাম্পিংটা যেন আচমকাই ঘটে গেল। এটা অনেকটা রাস্তায় চলার সময় ট্রাক থেকে হঠাৎ বোঝা পড়ে যাওয়ার মতো! আমি কেবল নিশ্চিত করেছিলাম, বলটা ঠিকঠাক ধরেছি কি না। আমি সবসময় দুই হাতে ক্যাচ নেওয়ার পক্ষপাতী, আর তাই এমন স্টাম্পিং করাটা আমার স্বাভাবিক অভ্যাস।”
উইকেটকিপিং নিয়ে তাঁর আবেগও স্পষ্ট। ধোনির মতে, “পিছনে না থাকলে নিজেকে অকেজো মনে হয়। এখান থেকেই আমি খেলার গতি বুঝতে পারি, ফিল্ডিং সাজানোর পরামর্শ দিতে পারি।”
তিনি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন যে ম্যাচের প্রথম ছয় ওভারে নতুন বলে পিচের আচরণ একরকম থাকে, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটি বদলে যায়। এই পরিবর্তন সবচেয়ে আগে বোঝেন উইকেটকিপার, যিনি সেই তথ্য অধিনায়কের কাছে পৌঁছে দেন।
ধোনির মতে, একজন কিপার সবসময় ব্যাটার ও বোলারের আচরণ খুঁটিয়ে লক্ষ্য করেন। তাঁর কথায়, “আমি খুব দ্রুত বুঝতে পারি, ব্যাটার কেন কোনো নির্দিষ্ট শট খেলল বা বোলার কী পরিকল্পনায় বল করল। কারণ, উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে পুরো খেলাটার প্রকৃত চিত্র চোখে পড়ে।”
তিনি আরও বলেন, ক্রিকেটে কিপারের ভূমিকা শুধু ক্যাচ নেওয়া বা স্টাম্পিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং খেলার গতিপ্রকৃতি বোঝা, বোলারদের সহায়তা করা এবং অধিনায়ককে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া তাঁর অন্যতম কাজ। উইকেটের পেছন থেকেই তিনি স্পষ্ট দেখতে পান পিচের অবস্থা কেমন বদলাচ্ছে, ব্যাটার কীভাবে শট খেলছে এবং বল কোথায় পড়লে কেমন আচরণ করছে। এই অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণই তাঁকে মাঠে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে, যা দলের পারফরম্যান্সে বড় ভূমিকা রাখে।
Leave a comment
Leave a comment
