মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত মামলার জট এখনও সুপ্রিম কোর্টে, এর মধ্যেই বড় ঘোষণা করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্যের অর্থ দফতর প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, পঞ্চম বেতন কমিশনের আওতায় থাকা সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। এই নতুন হার কার্যকর হবে ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে।
নবান্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, রাজ্যের সরকারি কর্মীরা তখন থেকে সংশোধিত হারে ভাতা পাবেন। এই সিদ্ধান্তে কর্মীদের স্বার্থে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধির এই ঘোষণাকে ঘিরে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই উৎসাহ তৈরি হয়েছে।
অর্থ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চম বেতন কমিশনের আওতায় থাকা কর্মীরা বর্তমানে ১৬১ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) পান। এবার ১০ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে এপ্রিল থেকে তা বেড়ে হবে ১৭১ শতাংশ। অবসরপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রেও ডিয়ারনেস রিলিফ (ডিআর) একই হারে বৃদ্ধি পাবে।
অন্যদিকে, ষষ্ঠ বেতন কমিশনের কর্মীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা ৪ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বাজেট ঘোষণার পর এবার নবান্ন থেকে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হল। এপ্রিল থেকে তাঁদের নতুন হার হবে ১৮ শতাংশ। অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরাও একই হারে ডিআর পাবেন। এই সংশোধিত হারে ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত সরকারি কর্মীদের জন্য বড় স্বস্তি আনবে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের অধীনে বেতন পাচ্ছেন, যা রাজ্য সরকারের নির্ধারিত কাঠামো অনুসারে কার্যকর রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা এর থেকে এক ধাপ এগিয়ে, কারণ তারা সপ্তম বেতন কমিশনের সুবিধা পাচ্ছেন। বিভিন্ন সূত্রের খবর, ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় স্তরে অষ্টম বেতন কমিশন কার্যকর হতে পারে, যা নতুন বেতন কাঠামো আনবে।
এই ব্যবধানের কারণে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা যায়। ফলে, পশ্চিমবঙ্গের কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে নতুন বেতন কমিশনের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে রাজ্য সরকার এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেনি, যা কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
পঞ্চম বেতন কমিশনের বকেয়া ভাতা সংক্রান্ত মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। ২০১৬ সাল থেকে এই আইনি লড়াই চলছে। ২০২২ সালে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে তিন মাসের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের নির্দেশ দেয়। তবে, সেই নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি।
ফলে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে গড়িয়েছে। এখন চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মীরা, যাদের বকেয়া পাওনা মেটানো হয়নি। রাজ্য সরকারের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই মামলার নিষ্পত্তি কবে হবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে জল্পনা অব্যাহত। কর্মীদের ন্যায্য পাওনা কত দ্রুত মিটবে, তা সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
Leave a comment
Leave a comment