কলকাতা থেকে সক্রিয় একটি সাইবার চক্র বিদেশি নাগরিকদের প্রতারণার জালে ফাঁসিয়ে আসছিল। প্রযুক্তিগত সহায়তার নাম করে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করত। প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে বহু মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা খুঁইয়েছেন। অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে এই চক্রের পর্দাফাঁস হয়েছে।
তদন্তে উঠে এসেছে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদেশি নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা হতো। কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণসহ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে। চাঞ্চল্যকর এই জালিয়াতির ঘটনায় সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
পুলিশ সেক্টর ফাইভ ও বাগুইআটিতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করেছে। অভিযানে বিলাসবহুল এক অফিস থেকে ৬৭ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়। তদন্তে প্রকাশ, এই প্রতারণা চক্রটি ২২ তলায় গোপনে পরিচালিত হয়ে বিদেশি নাগরিকদের টার্গেট করছিল।
ধৃতদের মধ্যে অন্যতম বেহালার দেবেন্দ্র সিং ও এন্টালির সাজু শেখ। তাদের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে বহু ল্যাপটপ, ডেস্কটপ ও ডায়ালার উদ্ধার হয়েছে, যা ব্যবহৃত হতো প্রতারণার কাজে। তদন্তে উঠে এসেছে আরেক সন্দেহভাজনের নাম—অবিনাশ জয়সওয়াল, চিনারপার্কের বাসিন্দা। পুলিশ তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, একাধিক মোবাইল ফোন এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করেছে।
মোট ৯ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা মিলেছে, যা প্রতারণার অর্থ বলেই অনুমান করা হচ্ছে। জব্দ করা নথিগুলোর মাধ্যমে চক্রের আরও তথ্য বের করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ মনে করছে, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যেতে পারে এবং পুরো নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ধৃতরা পুলিশের জেরায় স্বীকার করেছে, তারা গত কয়েক মাস ধরে বিদেশিদের সঙ্গে প্রতারণার এই চক্র চালিয়ে আসছিল। পুলিশ তদন্তে জানতে পারে, অফিসের একটি গোপন কক্ষে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা। অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ৫৮ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১৪টি মোবাইল, ল্যাপটপ ও ডেস্কটপও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
পুলিশের অনুমান, অভিযুক্তরা ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার সুযোগ নিয়ে বিদেশি নাগরিকদের বিশ্বাস অর্জন করত। বিশেষ করে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের মানুষকে প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার জাল বিছিয়েছিল তারা। ফোন কলের মাধ্যমে সমস্যার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হতো। এরপর নানা কৌশলে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হতো।
প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ লেনদেনের জন্য চক্রটি গিফট কার্ড ও বিটকয়েন ব্যবহার করত, যাতে লেনদেনের সূত্র গোপন রাখা যায়। দীর্ঘ তদন্তের পর পুলিশের হাতে আসে মূল অভিযুক্তরা—দেবেন্দ্র, সাজু ও অবিনাশ। তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
এখনও চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সন্ধানে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তদন্তকারীদের মতে, এই প্রতারণা চক্রের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত এবং এর সঙ্গে আরও অনেক ব্যক্তির যোগ থাকতে পারে। ধৃতদের মোবাইল, ল্যাপটপ ও নথি খতিয়ে দেখে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। চক্রের গোপন কার্যকলাপ ও লেনদেনের সমস্ত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। তদন্তকারীরা আশা করছেন, খুব শিগগিরই পুরো চক্রটিকে ধরা সম্ভব হবে।