কলকাতায় অক্সফোর্ডের ক্যাম্পাস করার আহ্বান “একদিনে জমি” বার্তা মমতার
সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
“গোটা ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ। ব্রিটিশ ভারতের প্রথম রাজধানী ছিল কলকাতা। কলকাতার যেমন রবীন্দ্রনাথ-নজরুল রয়েছেন তেমনি ইংরেজ কবি-সাহিত্যিকরাও কলকাতায় যথেষ্ট সমাদৃত।
বাংলার ছাত্র-ছাত্রীরা অত্যন্ত প্রতিভাশালী”। একথা উল্লেখ করে অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজের উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা, “আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ কলকাতায় একটা এডুকেশনাল ক্যাম্পাস করুন। একদিনেই জমি দেব।” বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন,
“বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কলকাতা হল গেটওয়ে। পশ্চিমবঙ্গে অনেক বিনিয়োগ আসছে। ২৩ লক্ষ মিলিয়ন বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে পশ্চিমবঙ্গে। এবং যার কাজ এগোচ্ছে। টাটা, উইপ্রো সবাই এসেছে। আমরা চাই কলকাতা থেকে লন্ডন সরাসরি বিমান চালু হোক। এডুকেশনাল হাব তৈরি হয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নতুন সেটআপ তৈরি করেছে রাজ্য সরকারের সহায়তায়। স্কিল ওয়ার্কার পশ্চিমবঙ্গ ভারতে পয়লা নম্বরে। দার্জিলিং এর চা জগদ্বিখ্যাত। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হাব তৈরি হচ্ছে কলকাতায়।”
মমতার কথায়, “আমরা কখনো ইংল্যান্ডকে ভুলতে পারবো না। আবার ইংল্যান্ড কখনো ভারতকে ভুলতে পারবে না। আমি অত্যন্ত সম্মানিত। অনেকবার আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে, কিন্তু আমি সময় পাইনি।”
ব্যক্তিগত জীবনে এবং রাজনৈতিক জীবনে তিনি যে আজীবন লড়াই করি বড় হয়েছেন কি কথা ওই দিনে বক্তৃতা তুলে ধরেন মমতা।
“আমার বয়স যখন 9 অথবা 10 তখন আমার বাবা মারা যান। সংসারের বড় মেয়ে হিসেবে হাল ধরতে হয়েছে। তখন থেকেই আমার জীবন সংগ্রাম শুরু করেছি। বিরোধী হিসাবে আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি। সরকারে থাকার সময়ও কাজ করছি। সাতবার পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়েছি। ৩৪ বছরের বাম শাসনের পর আমরা ক্ষমতায় এসেছি। করোনার কথা আমরা সবাই জানি। অর্থ সংকট চারদিকে হয়েছে। যারা অর্থনৈতিক দিক থেকে নিম্নবর্গ তাদের অসুবিধে হয়েছে”– জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গ যেমন প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের পিঠস্থান তেমনি এখানে রয়েছেন বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ। স্বাধীন ভারতের যে মূল ঐতিহ্য বৈচিত্রের মধ্যে একতা সেই আদর্শেই তিনি এবং তার পরিচালিত সরকার যে বিশ্বাস করে সে কথাও বুঝিয়ে বলেন মমতা। “পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে পাহাড় থেকে সমুদ্র। ভারত সর্ব ধর্মের দেশ। পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ বাস করেন। রাজ্যের ৩৩ শতাংশ সংখ্যালঘু মানুষের বাস।৬ শতাংশ আদিবাসী মানুষ। ২৩ শতাংশ তপশিলি উপজাতি। আমরা সবাই সবাইকেই ভালবাসি। সব থেকে বড় বিষয় একতা। স্বামী বিবেকানন্দ যা বলে গিয়েছিলেন। সমস্ত মানুষ মনুষ্যত্ব নিয়ে বাঁচতে ভালোবাসে। সেটাই ধরে রাখার চেষ্টা। মা মাটি মানুষ। গোটা পৃথিবীর মানুষ একজনকে একইভাবে চেনে। সেটাই হলো মা, মাদার। শ্রী রামকৃষ্ণ বলেছিলেন কেউ বলে জল কেউ বলে পানি কেউ বলে ওয়াটার।আমি যতক্ষণ চেয়ারে রয়েছি আমার কাছে সবাই সমান। কাজ করতে হবে সবার জন্য”– বলেন মমতা।
মূলত পশ্চিমবঙ্গে শিশু বালিকা তথা মহিলাদের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি ও ক্ষমতায়নের বিষয়টি বিশদভাবে তুলে ধরেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তার মস্তিষ্কপ্রসূত ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প ইউনেস্কো প্রথম স্বীকৃতি দেয় এবং তা গোটা দেশের কাছে রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও জানান মমতা। স্কুল স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত শুধু কন্যাশ্রী প্রকল্পই নয় পড়ুয়াদের জন্য একাধিক স্কলারশিপ প্রোগ্রাম পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক ছেলেমেয়েদের মেধার যেমন মানোন্নয়ন ঘটিয়েছে তেমনি স্কুলে ড্রপ আউট কমে শূন্য হয়েছে বলেও দাবি করেন মমতা।
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য স্মার্ট কার্ডের ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন মমতা। “আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। ইনস্টিটিউশনাল ডেলিভারি এখন ৯৯% এর উপরে। তাছাড়া মাদার এন্ড চাইল্ড হাব, একাধিক সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হয়েছে। সরকারি জায়গায় স্বাস্থ্য পরিষেবা বিনামূল্যে পশ্চিমবঙ্গে। অনেক ক্ষেত্রেই শিশু জন্ম নেওয়ার পর মা মারা যান। আমরা নিউবর্ন বেবি কেয়ার তৈরির পাশাপাশি করেছি মিল্ক ব্যাংক তৈরি করেছি। চাষিরা নিখরচায় শস্য বীমা পান।
আমরা লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প করেছি। এটা মডেল। অন্যান্য রাজ্যগুলি ফলো করছে। লক্ষীর ভান্ডার আজীবন একজন মহিলা পাবেন। ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প শুরু হয়েছে। আমাদের ৯৭ টা সামাজিক প্রকল্প রয়েছে। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে সরকারি প্রকল্প সমব্যথী রয়েছে যাতে জীবন শেষ হলেও তাদের শেষকৃত্যের জন্য কোন ধরনের পয়সা লাগে না” উল্লেখ করেন মমতা।
